পান্তা ভাত তৈরীর নিয়ম-সকালে পান্তা ভাত খাওয়ার উপকারিতা


আজকে আমরা যে বিষয় নিয়ে বলবো, সেটা হচ্ছে সকালে পান্তা ভাত খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। রাতে ভাত খাবার পর বেঁচে যাওয়া ভাতগুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখলে তা পান্তা ভাত হয়ে যায়। এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুরহ ব্যাপার যে গরমে পান্তা ভাত পছন্দ করে না। কিন্তু আমরা যে পান্তা খাই সেটা কি শুধু স্বাদ আছে বলেই খাই নাকি অনেক গুনাগুন আছে তাই খাই।
পান্তা ভাত তৈরীর নিয়ম-সকালে পান্তা ভাত খাওয়ার উপকারিতা
ভাত মজুদ রাখার অন্যতম উপায় হচ্ছে পান্তা। অনেকেই আমরা পান্তা ভাত খেয়ে থাকি কিন্তু পান্তা ভাতের যে উপকার গুলো রয়েছে সম্পর্কে অনেকেরই জানা নেই। তাই চলুন সকালে পান্তা ভাত খাওয়ার উপকারিতা গুলো জেনে নেওয়া যাক-

পেজ সূচিপত্রঃপান্তা ভাত তৈরীর নিয়ম-সকালে পান্তা ভাত খাওয়ার উপকারিতা

ভূমিকা

পান্তা ইলিশ ছাড়া বাঙালির নববর্ষ পালন অসম্পূর্ণই থেকে যায়। বলা বাহুল্য, বাঙালির কাছে পান্তা ইলিশ ছাড়া পহেলা বৈশাখ পালন একেবারেই অসম্ভব। বাঙালির প্রধান খাদ্য ভাত। ভাত আমরা বিভিন্নভাবে গ্রহণ করি। কেউ গরম ভাত খায় আবার কেউ পান্তা হিসেবে খেয়ে থাকে।

বাংলাদেশের কৃষকেরা পান্তা ভাত খেয়ে সকালে কাজে যাই। আর এই পান্তা ভাত কাজ করার জন্য শক্তি যোগায়। আর সকালে পান্তা ভাত খাওয়ার উপকারিতা কি বা খেলে যে সকল উপকার পাওয়া যায় তা নিম্নের আর্টিকেলটি পড়লে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে।

সকালে পান্তা ভাত খেলে কি মোটা হয়

ভাতের সাথে বাঙালির একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যে বেশি ভাত খাই তার ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।সকালে পান্তা ভাত খেলে মানুষ মোটা হয় কথাটি সত্যি। কারণ পান্তাতে প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল থাকে। এই অ্যালকোহলের কারণে মানুষের ঘুম ভাব চলে আসে। মানুষ বেশি ঘুমালে ক্যালরি খরচ কম হয়। এই কারণে মোটা হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

প্রতিদিন পান্তা ভাত খেলে কি হয়

পান্তা ভাত শর্করা জাতীয় খাবার। পানিতে ভাত ডুবিয়ে রাখার ফলে এতে গাজন প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি করতে সহায়তা করে। ল্যাকটিক অ্যাসিড সৃষ্টি হওয়ায় তার ph এর পরিমাণ কমে যায়। তখন ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য ছত্রাক জাতীয় পদার্থ পান্তা ভাতকে আক্রমণ করতে পারে না। যার ফলে ভাত ভালো থাকে। এই পান্তা ভাত খেলে শরীর সুস্থ থাকে। শরীরের জন্য যে আয়রন দরকার পান্তা ভাত খেলে তার ঘাটতি পূরণ হয়।
প্রতিদিন পান্তা ভাত খেলে শরীর সতেজ থাকে, শরীরকে ঠান্ডা রাখে, পানির ঘাটতি পূরণ হয়। ফলে শরীরের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে থাকে। পান্তা ভাতে অনেক ব্যাকটেরিয়া থাকে যা শরীরের জন্য খুব উপকার। সকালে পান্তা ভাত খাওয়ার মাধ্যমেই এই উপকার গুলো পাওয়া যায়।তাহলে বোঝা যাচ্ছে,সকালে পান্তা ভাত খাওয়ার উপকারিতা অনেক।

পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক

পান্তা ভাতের যেমন উপকারিতা রয়েছে এর ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা রয়েছে। চলুন আমরা জেনে নিই এর ক্ষতিকর দিকগুলো কি-
  • পান্তা ভাত হজম করতে সাহায্য করে। কিন্তু যাদের গ্যাসের সমস্যা রয়েছে তারা পান্তা ভাত খাওয়া এড়িয়ে চলুন। কারণ পান্তা ভাত খাওয়ার ফলে আপনার গ্যাসের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
  • পান্তা ভাত খাওয়ার কারণে শরীর দুর্বল হতে পারে। এক্ষেত্রে বয়স অনেক বেশি হলে পান্তা ভাত না খাওয়াই ভালো।
  • পান্তা ভাত বেশিক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেড়ে যায় যেটা উপকারের চেয়ে শরীরের ক্ষতি করে বেশি।
আরও পড়ুনঃবেশি কান্না করলে চোখের কি ক্ষতি হয়
  • আপনি যখন ভাত খাবেন তখন ভাতগুলো নষ্ট হয়েছে কিনা তা দেখে নিবেন। কখনোই নষ্ট ভাত খাবেন না। এতে শরীরে অনেক রকম সমস্যা হয়।
  • যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা পান্তা ভাত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • গর্ভবতী মহিলারা কখনোই পান্তা ভাত গ্রহণ করবেন না। এতে করে পেটে থাকা বাচ্চার ক্ষতি হয় এবং বাচ্চার ওজন হ্রাস পায়।
উপরের বিষয়গুলো পড়ে বুঝতে পেরেছেন যে পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিকগুলো কি কি হতে পারে।

পান্তা ভাত তৈরীর নিয়ম

পান্তা ভাত তৈরি করার ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হয়। অনেকেই এই ভুলটা করে থাকেন। সেটা হচ্ছে গরম ভাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে পান্তা তৈরি করে। এটা সঠিক পদ্ধতি নয়। যার ফলে ভাতটা দ্রুত নষ্ট হতে পারে। তাই পান্তা তৈরি করার জন্য প্রথমে গরম ভাত ঠান্ডা করতে হবে। তারপর সেই ঠান্ডা ভাতে পানি দিয়ে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। তাহলে সেই পান্তাটি খুব ভালো হয়। 
নরম পান্তা তৈরি করার ক্ষেত্রে ভাত নরম করে রান্না করতে হবে। তারপর সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এতে করে নরম পান্তা তৈরি হবে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে বেশিক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে ভাত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ভাত শক্ত থাকা অবস্থায় পানি দিয়ে রাখলে খুব শক্ত হয় এবং খাওয়ার সময় সেটা ভালো লাগে না। তাই ভাত নরম করে রান্না করুন। 

অনেকেই আছে ভাত নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে এতে পানি মিশিয়ে দেন। কিন্তু সেটি করা ভুল। তখন ভাতটা খাওয়ার সময় টক টক অনুভূত হয়। যা দেহের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। ভাতে পরিমাণ অনুযায়ী পানি দিবেন। পরিমাণ মতো পানি দিলে ভালো মজবে। আর যেই পানি দিবেন সেটি যেন অবশ্যই পরিষ্কার হয়। এভাবে পান্তা তৈরি করলে খেতে সুস্বাদু লাগে।

পান্তা ভাতের উপকারিতা

পান্তা ভাত খাওয়ার বিশেষ কিছু উপকারিতা রয়েছে। চলুন এই উপকারিতা গুলো কি তা জেনে নিই-
  • পান্তা ভাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে যা রক্তস্বল্পতা কমাতে সাহায্য করে।
  • পান্তা ভাতে যে ব্যাকটেরিয়া রয়েছে তা শরীরের ইমিউন উন্নত করতে সহায়তা করে।
  • পান্তা ভাতে যে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি রয়েছে তা শরীরের প্রয়োজন মেটানোর ক্ষেত্রে খুব সহায়ক।
  • পান্তা ভাতে ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকায় শরীরের ওজন কম রাখতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃসকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার উপকারিতা
  • আলসার ভালো করার ক্ষেত্রে পান্তা ভাত বেশ উপকারী।
  • পান্তা খাওয়ার ফলে নিদ্রাহীনতা কমে যায়।
  • দেহের তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য পান্তা ভাত বেশ কার্যকরী।
  • পান্তা ভাত খাওয়ার ফলে কোলাজেনের মাত্রাটা বেড়ে যায়। যা ত্বকটা সতেজ রাখার জন্য অর্থাৎ তারুণ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে সহায়তা করে।
উপরের বিষয়গুলো পড়লে বোঝা যায় সকালে পান্তা ভাত খাওয়ার উপকারিতা কতটুকু।

পান্তা ভাতে কি ওজন বাড়ে

শুকনো ভাত 8 থেকে 10 ঘন্টা পানিতে ডুবিয়ে রাখলে তাতে ফাইটিক এসিড তৈরি করে যা বিক্রিয়ার মাধ্যমে ল্যাক্টিক অ্যাসিড সৃষ্টি হয় এবং ভাতের গুনাগুন বেড়ে যায়। ভিটামিন বি৬ এবং ভিটামিন বি১২ এই দুইটি ভিটামিন এতে রয়েছে। এটি দেহের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। শরীরের রক্তশূন্যতার পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এটি একটি গাজন প্রক্রিয়ার খাদ্য। গাজন প্রক্রিয়ার খাওয়ার হওয়াই এতে অনেক বেশি ফাইবার এবং ক্যালোরি রয়েছে। যার ফলে আপনার ওজন বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে যারা মোটা হতে চান না তাদের এই খাবার এড়িয়ে চলা উচিত । তাহলে বোঝা যাচ্ছে, পান্তা ভাত খেলেও কিছু ওজন বাড়তে পারে।

পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ

গবেষণায় দেখা গেছে পান্তা ভাতে প্রচুর পুষ্টি গুনাগুন বিদ্যমান রয়েছে। আগে পান্তা ভাতকে গরিবের খাবার বলা হত। পান্তা ভাতে প্রচুর আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম ইত্যাদি রয়েছে। এতে ল্যাকটিক এসিড ও তৈরি হয়। প্রবাদে পাওয়া যায়, পান্তাভাতের জল, তিন পুরুষের বল। পান্তা ভাতে অনেক শর্করা হয়েছে যা দেহের জন্য শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করে। পান্তা ভাত বাচ্চার জ্বর জ্বর অনুভূতি দূর করতে সহায়তা করে। শরীরে যখন পানি শূন্যতার অভাব দেখা দেয় তখন পান্তা ভাত সেই অভাব পূরণে সাহায্য করে।
গরম ভাতের থেকে পান্তা ভাতে অনেক বেশি পুষ্টি রয়েছে। এছাড়া পান্তা ভাত খেলে দ্রুত হজম হয়ে যায়। যদি পেটে প্রায় থাকে তাহলে সেটির উপশম হয়। পান্তা ভাতে সোডিয়াম কম থাকায় এটি দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই বলা যায়, পান্তা ভাতে যে পুষ্টিগণ রয়েছে তার শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

শেষ কথা

অবশেষে বলতে হয় পান্তা ভাত বাংলার মানুষের কাছে একটি পছন্দের খাবার। তবে চাউল বিভিন্ন রকম হওয়ায় পান্তা ভাতে ক্যালরির পরিমাণে তারতম্য হয়। পান্তা ভাতে যে সকল পুষ্টিগুণ রয়েছে,উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে সেই সম্পর্কে জানতে পারলাম। উপরের পোস্টটি সময় দিয়ে এবং মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। পোস্টটি সবার সাথে শেয়ার করুন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url