ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম জানেন? ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন


আসসালামু আলাইকুম। আজকের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে ড্রাগন ফল। এখনো অনেকেই জানেন না ড্রাগন ফল কি, দেখতে কেমন এবং এর নাম পর্যন্ত শুনেন নি। তাই ড্রাগন ফল সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। এর কার্যকারিতা কতটুকু এবং এর উপকারিতা রয়েছে কিনা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। 
ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম-ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা
সুতরাং যাদের ড্রাগন ফল সম্পর্কে ধারণা নেই তাদের জন্য এই পোস্ট। কারণ এই পোস্টে ড্রাগন ফলের সকল ইতিহাস বর্ণনা করা হবে। তাই চলুন জেনে নিই ড্রাগন ফলের ব্যবহার এবং ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা কতটুকু রয়েছে ইত্যাদি সম্পর্কে।

পেজ সূচিপত্রঃ ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম-ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা

ভূমিকা

ড্রাগন অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। ড্রাগন ফল পুষ্টি উপাদানে ভরপুর থাকে। কিন্তু ড্রাগন ফলের পরিচিতি বাংলাদেশে খুব কম ছিল। বর্তমানে ড্রাগন ফল বাংলাদেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। তবে এখন বাংলাদেশে এর চাষাবাদ করা হচ্ছে। আমরা এখন বাজারে প্রায় ড্রাগন ফল দেখতে পাই। কিন্তু ড্রাগন ফলের দাম একটু বেশি থাকার কারণে অনেকেই এটি ক্রয় করতে পারেন না। ড্রাগন ফলে ভিটামিন সি, ফাইবার ইত্যাদি রয়েছে। এই উপাদান গুলো আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী।

কিন্তু আমরা ড্রাগন ফলের শুধু ভিতরের অংশটুকু খেয়ে থাকে। শুধু ভেতরের অংশ নয় এর খোসাতে অনেক ভিটামিন রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজন। তাই আমরা ড্রাগন ফলের পাশাপাশি এর খোসাতে কি উপাদান রয়েছে এবং কতটুকু উপকারী সে সম্পর্কে জেনে নিব।

ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম

যে কোন ফল খেতে হলে কিছু নিয়মকানুন মেনে খাওয়া উচিত। আর ফল খাওয়ার একটা নির্ধারিত সময় থাকে। যেকোনো সময়ই ফল খাওয়া উচিত নয়। এক্ষেত্রে ড্রাগন ফল খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। তবে অন্য ফল খাবার নিয়ম থেকে ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম আলাদা নয়। প্রথমে একটি ড্রাগন ফল নিন। তারপর নিচের অংশটুকু কাটুন। এবার ফলটি মাঝখান দিয়ে চিরে দুটি অংশ করুন। এবার খোসাটি ছাড়িয়ে নিন এবং যেভাবে টুকরো করার ইচ্ছে সেভাবে ছোট ছোট খন্ডে কাটুন। ড্রাগন ফল ছোট ছোট করে খেতে পারবেন আবার জুস করেও খাওয়া যায়।

ড্রাগন ফল খাওয়ার সঠিক সময়

আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের ফল খেয়ে থাকি। আমাদের জানা নেই কখন কোন ফল খেতে হবে। ফল খাওয়ার একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। সঠিক সময়ে ফল না খেলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে যারা শরীর চর্চা করেন তারা শরীর চর্চার আগে ফল খেতে পারেন। এই সময় ফল খেলে শরীর চর্চার ক্ষেত্রে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। সকালে আমরা যখন খালি পেটে থাকি তখন ফল খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। যেমন চুল পড়া, চুল পাকা ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

খালি পেটে ড্রাগন ফল

আমরা এই আলোচনায় জানবো খালি পেটে ড্রাগন ফল খেলে কি হয়। তবে অনেকে ধারণা করেন, খালি পেটে ফল খাওয়ার কারণে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তবে খালি পেটে ফল খেলে মস্তিষ্কের কোষগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। অ্যাসিডিটি হবে এই ভেবে অনেকে খালি পেটে ফল খেতে ভয় করেন। কিন্তু ফল খাওয়ার ফলে এসিড এবং অ্যালকেলাইনের মাত্রা স্বভাবিক থাকে। যার ফলে এসিডিটি হওয়ার সম্ভাবনা দূর হয়ে যায়।
খালি পেটে ড্রাগন ফল খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। ড্রাগন ফলে ভিটামিন বি ৩ থাকায় রক্তে যে বিষাক্ত কোলেস্টেরল থাকে তা দূর করে দেয় এবং ত্বককে অনেক সতেজ করে তোলে। হার্টের জন্য ড্রাগন ফল অনেক উপকারী। এই ফলে লাইকোপেন রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম।
বিঃদ্রঃ খালি পেটে খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা

অন্যান্য ফলের মতো ড্রাগন ফলেও অনেক উপকার রয়েছে। এই ফল খেলে অনেক পুষ্টি পাওয়া যায়। এই ফলের পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা সম্পর্কে অনেকের জানা নেই। তাই চলুন জেনে নেই ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি।
  • ওজন কমায়ঃ ড্রাগন ফলে কোলেস্টেরল নেই বললেই চলে। তাই খেলে দেহে চর্বি জমে না। যার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • হার্ট ভালো রাখেঃ ড্রাগনে ওমেগা ৯ ও ওমেগা ৩ বিদ্যমান থাকে, যা হার্টকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • কিডনি ভালো রাখেঃ ড্রাগনে পটাশিয়াম বেশি থাকায় কিডনি ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় নাশপাতি খাওয়ার উপকারিতা
  • হাড় শক্ত করেঃ হাড়কে শক্ত করতে ড্রাগন ফল অত্যন্ত কার্যকরী একটি ফল। কারণ ড্রাগনে ম্যাগনেসিয়াম উপস্থিত রয়েছে। যা হাড়কে শক্ত করে তোলে।
  • হজমে সাহায্য করেঃ ড্রাগন ফল দ্রুত হজমে সহায়তা করে থাকে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ এই ফলে ভিটামিন সি থাকার কারণে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ ক্যান্সারের মত মারাত্মক রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
    উপরোক্ত উপকারিতা গুলো ছাড়াও ড্রাগন ফল খেলে আরো বিভিন্ন ধরনের উপকার হয়। যেমন: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে, রক্তস্বল্পতার অভাব পূরণ করে ইত্যাদি।

    ড্রাগন ফলের অপকারিতা

    ড্রাগন ফলটি বিদেশি হলেও বর্তমানে বাংলাদেশে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশে এর চাষাবাদ করে অনেকে লাভবান হচ্ছে। আর ড্রাগন ফল খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। পাশাপাশি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে।
    • ড্রাগন ফলে শর্করার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তাই যাদের ডায়াবেটিকস রয়েছে তাদের ড্রাগন ফল না খাওয়াই ভালো।
    • ড্রাগন ফলের দামটা অনেক বেশি হওয়ায় অনেকে এটি খেতে পারে না।
    • যদি এলার্জি থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে ড্রাগন ফল খাওয়ার কারণে এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়।
    • এই ফল বেশি খেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
    তাই আমরা ড্রাগন ফল খাওয়ার সময়ই এই অপকারিতা গুলো বিবেচনায় রেখে ড্রাগন ফল গ্রহণ করবো। তাহলে আমরা এই সকল সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারবো।

    ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা

    আমরা ফলমূল খাই পুষ্টির অভাব পূরণের জন্য। আমরা যেকোনো ফল খাওয়ার পর খোসা ফেলে দিই। কিন্তু আমরা কি জানি খোসাতে কি পরিমান পুষ্টিগুণ রয়েছে? আর এই সম্পর্কে না জানার কারণে আমরা খোসা ফেলে দিই। কিন্তু আজকের এই আলোচনায় আপনার মনের পরিবর্তন ঘটবে। আলোচনায় খোসার উপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনি আর কোনদিন খোসা ফেলার চিন্তাভাবনা করবেন না।

    তবে খোসা কিভাবে খেতে হবে এটা আগে জানতে হবে। খোসাগুলো পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এরপর একটা পাত্রে পানি নিয়ে সেই পানির মধ্যে খোসা গুলো দিয়ে দিন। এবার হালকা তাপে পানি গরম করতে হবে। কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে পানি লাল হয়ে গেছে। খোসা থেকে পানি পৃথক করে নিয়ে সেই পানি খেতে হবে। এই পানি আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে। ডায়াবেটিস রোগীরা এই পানি খেতে পারেন। কারণ এই পানি খেলে ডায়াবেটিস স্বাভাবিক থাকে।
    এছাড়াও এই পানি হৃদরোগের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। এমনকি মুখের উজ্জ্বলতা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। যাদের অকারণে চুল পড়ে যায়, তারা এই ড্রাগন ফলের খোসা পানি খেতে পারেন। তাই আমরা ফল খাওয়ার পর কখনোই খোসা ফেলে দিব না। আশা করি ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা গুলো সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়ে গেছেন।

    ড্রাগন ফল দিয়ে রূপচর্চা

    ড্রাগন ফল শুধু খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয় না বরং এটি রূপচর্চায় বিশেষ অবদান রাখে। ড্রাগনের রস যদি মুখে ব্যবহার করা হয় তাহলে মুখের ব্রণ দূর হয়। অনেক সময় আমাদের মুখ রোদে কালচে হয়ে যায়। এই কালচে ভাব দূর করার জন্য ফলের ১/৪ অংশ এবং ই ক্যাপসুল একসঙ্গে যুক্ত করে ব্যবহার করলে এই কালচে ভাব দূর হয়। তাহলে বোঝা যাচ্ছে ড্রাগন ফল এমন একটি ফল যে ফলের পুরোটাই ব্যবহারযোগ্য। এটি বিভিন্ন ধরনের রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সাথে সাথে রূপচর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে রুপচর্চা করার আগে বিশেষষ্ণের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

    শেষ কথা

    পরিশেষে বলা যায়, উপরের আলোচনার মাধ্যমে আপনারা ড্রাগন ফল সম্পর্কে এবং ড্রাগন ফলের উপকারিতা অপকারিতা, ড্রাগন ফল খেলে কি হয়, কখন খেতে হয় ইত্যাদি বিষয়ে জেনে গেছেন। আরো জেনে গেছি যে, ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ সম্বন্ধে। এবং আমরা এটাও জেনেছি যে ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা সম্পর্কে। 

    তাই আমরা ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে যে উপকার গুলো পেয়ে থাকি সেগুলোর কথা বিবেচনা করে ড্রাগন ফল সকলের খাওয়া উচিত। আর আর্টিকেলটি পড়ে যদি এতটুকু উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই অন্যরা যাতে উপকৃত হতে পারে সেজন্য বেশি বেশি শেয়ার করে দিন।
    Next Post Previous Post
    No Comment
    Add Comment
    comment url