বেগুন গাছের পাতা হলুদ হওয়ার কারন-বেগুন গাছের রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন


আসসালামু আলাইকুম। আজকে বেগুন গাছ নিয়ে আলোচনা করব। সকলে আমরা বেগুন গাছের নাম শুনেছি। বেগুন অনেক সুস্বাদু একটি সবজি। বেগুন প্রায় সকলেই খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু এই বেগুন উৎপাদন কালে বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই দেখা দেয়। এই রোগ গুলো বেগুনের অধিক ফলন বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
বেগুন গাছের পাতা হলুদ হওয়ার কারন-বেগুন গাছের রোগ ও প্রতিকার
এই রোগ গুলো বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বেগুন গাছের রোগ শনাক্ত করে, সেগুলো প্রতিহত করার মাধ্যমে অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব। তাই চলুন জেনে নিন বেগুন গাছের রোগ ও প্রতিকার কি কি এবং বেগুনের ফলন অধিক পাওয়ার জন্য কি কি করণীয় রয়েছে ইত্যাদি সম্পর্কে।

পেজ সূচিপত্রঃ বেগুন গাছের পাতা হলুদ হওয়ার কারন-বেগুন গাছের রোগ ও প্রতিকার

ভূমিকা

বেগুন শীতকালীন একটি সবজি। কিন্তু এখন প্রায় বছরের সব সময় পাওয়া যায়। বেগুনে অনেক পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে, যা শরীরের পুষ্টির অভাব পূরণ করে।বেগুন ভাজি করে, এমনকি ভর্তা করেও খাওয়া যায়। বর্তমানে বেগুন চাষ এখন লাভজনক ব্যবসা হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই বেগুন চাষে বিভিন্ন ধরনের রোগের সম্মুখীন হতে হয়। এই রোগ গুলো এমন পর্যায়ে চলে যায়, যার কারণে গাছগুলো নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়ে যায়।

কিন্তু এই রোগগুলো সম্পর্কে আমাদের অনেকের ধারণা নেই। এছাড়াও এই রোগের প্রতিকার কিভাবে করতে হবে তাও আমাদের জানা নেই। তাই আজকে বেগুন গাছের রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকুন।

বেগুন গাছের পাতার রোগ ও প্রতিকার

বেগুন গাছে রোগ হওয়ার সাথে সাথে এর পাতায় বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। অনেক সময় পাতা পোকাতে ছিদ্র করে দেয়। তাহলে জেনে নিই বেগুন গাছের পাতার রোগ গুলো কি কি এবং এটি কিভাবে প্রতিকার করা যাবে। অনেক সময় দেখা যায় বেগুন গাছের পাতা ঝলসে গেছে। আসলে এটি বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পাতা এ ধরনের হয়ে যায়। 
এছাড়াও পাতায় বিভিন্ন ধরনের দাগ দেখা যায়। এটাও একটি পাতার রোগ। পাতায় দাগ হয়ে থাকে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকের কারণে। পাতায় আরো এক ধরনের রোগ দেখা যায় সেটি হচ্ছে পাতা কুঁকড়ে যাওয়া। এই রোগটা প্রায়ই দেখা যায়। এই রোগ গুলোর কারণে একটি বেগুন গাছ সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। এগুলো কিভাবে প্রতিকার করা যায় এখন সে সম্পর্কে জানব।
প্রতিকারঃ বেগুন গাছের পাতা বিভিন্ন কারণে ঝলসে যায় এর জন্য প্রথম করণীয় হচ্ছে ভালো বীজ সংগ্রহ করা। এরপর ছত্রাকনাশক দিতে হবে। পাতায় দাগ হলে আমরা একই পদ্ধতি অনুসরণ করব। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, গাছের গোড়ায় আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। আরেকটি হচ্ছে পাতা মোড়ানো রোগ। এক ধরনের পোকা আক্রমণ করার কারণে এই রোগ হয়ে থাকে। এই পোকার বিস্তার রোধ করার জন্য ম্যালাথিয়ন কীটনাশক বেশ কার্যকরী। এছাড়াও পোকাসহ পাতা ছিড়ে ফেলে দিতে হবে। সর্বোপরি আক্রান্ত পাতা আগুনে পুড়িয়ে ফেলা উত্তম।
বিঃদ্রঃ উপরোক্ত বিষয়ে কৃষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। তাই কৃষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

বেগুন গাছের রোগ ও প্রতিকার

আমরা বেগুন গাছের বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখতে পাই। এই রোগ গুলোর মধ্যে আমরা অনেক রোগ সম্পর্কে জানিনা।
রোগ সমূহঃবেগুন গাছের রোগের মধ্যে একটি হচ্ছে গাছ ঢলে পড়া। এই রোগ হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে ছত্রাকের আক্রমন। এই সময় পাতা হলুদ রংয়ের হয়ে থাকে।
প্রতিকারঃ গাছটি তুলে মাটির নিচে ঢেকে দিন। বীজ কার্বেন্ডাজিম দ্বারা পরিষ্কার করে নিন। নাইট্রোজেনের ভালো উৎস হচ্ছে নাইট্রেট। এটি ব্যবহারে, রোগ গাছকে কম আক্রমণ করতে পারে।
রোগসমূহঃ আরেকটি রোগ হচ্ছে পাতার আকার ছোট হওয়া। এই রোগের প্রধান কারণ হচ্ছে মাইকোপ্লাজমা।
প্রতিকারঃ প্রথম কাজ হবে গাছটি তুলে ফেলে দেওয়া। এক্ষেত্রে চুন ব্যবহার করলে গাছ ভালো হয়ে ওঠে। এছাড়াও রোগটা যদি বেশি হয় তাহলে ইমিডাক্লোরপ্রিড স্প্রে করুন।
তাহলে আমরা উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে বুঝতে পারলাম বেগুন গাছের রোগ ও প্রতিকার কিভাবে করতে হয় সেই সম্পর্কে।
তবে গাছের রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য কৃষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

বেগুন গাছের পাতা কোকড়ানো রোগ

এটি একটি বেগুন গাছের বড় সমস্যা। এই রোগটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হলে কিংবা পরিবেশগত কারণেও হতে পারে। এমনকি খাদ্যভাব দেখা দিলেও এই সমস্যা হতে পারে। যদি সঠিকভাবে সেচ দেওয়া না হয়, তাহলেও এই রোগটি হয়ে থাকে। এ সময় দেখা যায় পাতাগুলো কুঁচকে রূপ নিয়েছে। কিন্তু এই রোগগুলোকে অবহেলা না করে প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে।

বেগুন গাছের পাতা হলুদ হওয়ার কারন

বেগুন গাছ যখন বিভিন্ন রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন গাছের পাতা হলুদ দেখায়। অনেক কারণে হলুদ হতে পারে। এই রোগগুলো থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে সার প্রয়োগের মাত্রা যদি বেশি হয়ে যায় সেক্ষেত্রে পাতা হলুদ হয়। আবার যদি কম হয়ে যায় সেক্ষেত্রেও হলুদ হয়। পাতা হলুদ হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে পটাশিয়ামের অভাব। পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হলেও এই রোগ হতে পারে।

বেগুন গাছের পাতা কোকড়ানো রোগের প্রতিকার

সাধারণত পাতা কোকড়ানো রোগ প্রায়ই দেখা যায়। আমরা আগেই জেনেছি এটা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। কিন্তু এই রোগের প্রতিকার করা উচিত। তা না হলে বেগুন গাছ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। গাছগুলো এমন জায়গায় রোপন করতে হবে যেখানে সূর্যের আলো সচরাচর পড়ে। কারণ এই সূর্যের আলো গাছের জন্য অধিক প্রয়োজনীয়। সময় মত সেচ দিতে হবে। পোকামাকড় আক্রমণ করলেও এ রোগ হয়। সেক্ষেত্রে পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ইমিডাক্লোরপ্রিড কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। তাই এই রোগ গুলো প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে প্রতিকারের ব্যবস্থা করা উচিত।

বেগুনের বিভিন্ন রোগ

এ পর্যায়ে আমরা বেগুনের বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে জানব। রোগগুলো হচ্ছে-
  • অনেক সময় দেখা যায় বেগুন ফেটে যায়।
  • বেগুন পচে যায়।
  • বেগুনের কান্ড পঁচা রোগ।
  • বেগুনের মোজাইক রোগ।
  • কোনিফেরা ব্লাইট রোগ।
এই রোগ গুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের রোগ রয়েছে যেগুলো দ্বারা বেগুন আক্রান্ত হয়।

বেগুনের পোকা দমনের ঔষধ

বেগুনের পোকা দমনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে কীটনাশক এর ব্যবহার হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে সানটাপ ১ লিঃ পানিতে ২.৪gm দিয়ে ব্যবহার করুন। এছাড়াও ম্যাজিক ১০ ই সি ব্যবহার করা যায়। এগুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের ঔষধ রয়েছে যেমন ট্রেসার ৪৫ এস সি,কট ১০ ই সি ইত্যাদি।
তবে বেগুনের পোকা দমনের ঔষুধ প্রয়োগের পূর্বে অবশ্যই কৃষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

বেগুন গাছে সার দেওয়ার নিয়ম

আমরা অনেকে বেগুন চাষ করি কিন্তু বেগুনে সার দেওয়ার নিয়ম কানুন সম্পর্কে জানিনা। কি পরিমান সার দিতে হবে কখন দিতে হবে ইত্যাদি সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। তাই সার কিভাবে দিতে হবে সেটি আগে জানতে হবে। নিয়ম জেনে সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হবে।আট টন গোবর দিতে হবে। অবশ্যই ক্ষেত্রে জমির পরিমাণ হতে হবে এক হেক্টর। ৩৭৫ kg ইউরিয়া, MOP ২৫০kg, এর সাথে টিএসপি সার দিতে হবে। তবে বেগুন গাছে সার দেওয়ার নিয়ম কি তা কৃষি বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করে দেওয়া উচিত।

বেগুন চাষের উপযুক্ত সময়

আমরা জানি বেগুন একটি শীতকালীন সবজি। কিন্তু বেগুন গাছের চারা শীতকালের আগেই রোপন করতে হয়। চারা রোপনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে শ্রাবণ থেকে আশ্বিন মাস। এই সময় বিভিন্ন ধরনের সার প্রয়োগ করে জমি তৈরি করে নিতে হয়।

শেষ কথা

অবশেষে, বেগুন এমন একটি সবজি যেটির উপকারিতা অনেক। কিন্তু বেগুন খাওয়ার ফলে অনেকের এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু বেগুন চাষাবাদ করা একটি কষ্টের কাজ। কষ্ট এ কারনে যে, এই গাছে বিভিন্ন ধরনের রোগ বেশি হয় এবং বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক সার প্রয়োগ করতে হয়। যার কারণে একটু কষ্ট বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু আজকে জানলাম বেগুন গাছের রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে। আরো জানলাম এই রোগগুলো কি কি রোগ হতে পারে এবং সেগুলো কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় সেই সম্পর্কে।

তাই বলব ওপরের পোস্টটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই পোস্টটি অন্যের সাথে শেয়ার করে দিন এবং নতুন নতুন তথ্য পেতে ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। অসংখ্য ধন্যবাদ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url