অ্যালোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা-রূপচর্চায় অ্যালোভেরার ব্যবহার


আসসালামু আলাইকুম। আজকে যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব সেটি অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। এটি রূপচর্চা ছাড়াও ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিষয়টি হচ্ছে রূপচর্চায় অ্যালোভেরার ব্যবহার সম্পর্কিত। এই অ্যালোভেরার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এলোভেরা ব্যবহারে ত্বক যেমন উজ্জল হয়ে ওঠে তেমনি চুলে ব্যবহার করলে চুল অনেক সুন্দর হয়ে ওঠে।
অ্যালোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা-রূপচর্চায় অ্যালোভেরার ব্যবহার
দেহের বিভিন্ন রকম রোগ দূর করতে অ্যালোভেরা ব্যবহৃত হয়। তাই চলুন জানা যাক, রূপচর্চায় অ্যালোভেরার ব্যবহার কিভাবে করতে হয় এবং পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরা কতটুকু কার্যকরী ভূমিকা রাখে। সুতরাং অ্যালোভেরা সম্পর্কিত সকল খুঁটিনাটি বিষয়গুলো জানতে হলে আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকতে হবে।

পেজ সূচিপত্রঃ অ্যালোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা-রূপচর্চায় অ্যালোভেরার ব্যবহার

ভূমিকা

অ্যালোভেরা সম্পর্কে বলতে গেলে এর সকল উপকারিতা গুলো সাথে পুষ্টিগুণ আলোচনা করতে হবে। অ্যালোভেরা ত্বকের যেমন সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তেমনি চুলকে করে তোলে লম্বা মজবুত। এমনকি চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে থাকে। শুষ্ক ত্বকে অ্যালোভেরা ব্যবহার করলে ত্বক অনেক সতেজ থাকে। মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য আমরা বিভিন্ন রকম ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে থাকি। এতে করে আমাদের ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায়। কিন্তু অ্যালোভেরাতে ত্বক তৈলাক্ত হয় না।

রাতে এলোভেরা ব্যবহার

মুখকে মসৃণ করে তোলার জন্য রাতে এলোভেরা ব্যবহার করা হয়। মুখের ব্রণ, কালো দাগ, মেস্তারদাগ ইত্যাদি সমস্যা গুলো দূর হয়ে যায়। মুখের লাবণ্য ফিরিয়ে আনতে রাতে এলোভেরা ব্যবহার করুন। রাতে এলোভেরা ব্যবহারের ফলে নিম্নোক্ত উপকার গুলো পাওয়া যায়।
  • রাতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের ফলে মুখ তৈলাক্ত হয়ে যায় কিন্তু এলোভেরা ব্যবহার করলে সেটি হয় না।
  • যাদের ত্বক শুষ্ক ধরনের তারা এলোভেরা জেল ব্যবহার করলে ত্বক সতেজ থাকে এবং শুষ্কভাব কেটে যায়।
  • মুখের ব্রণের দাগ বা যেকোনো কালো দাগ দূর করার জন্য রাতে আমরা এলোভেরা দিয়ে রাখতে পারি। সকালে সেটি ধুয়ে নিন। তাহলে দাগগুলো নিমিষেই দূর হয়ে যাবে।
  • ত্বকের বলিরেখা ভালো করার জন্য এলোভেরার সঙ্গে মধু যুক্ত করে ত্বকে ব্যবহার করলে বলিরেখা ভালো হয়।

অ্যালোভেরা জেল মুখে ব্যবহারের নিয়ম

আমরা অনেকেই অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এলোভেরা জেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। এই নিয়ম অনুসারে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করলে সুফল পাওয়া যাবে। মুখের কালো দাগ, ব্রনের দাগ দূর করতে গোলাপ জলের সাথে এলোভেরা জেল মিশ্রিত করে নিন। তারপর মিশ্রনটি মুখে বা ঘাড়ে লাগান। তাহলে দাগগুলো নিমিষেই উধাও হয়ে যাবে।
অনেক সময় আমাদের চেহারা রোদে পুড়ে যাই। এই সমস্যাটা দূর করার জন্য অ্যালোভেরা জেল এর সাথে লেবুর রস মিশ্রিত করে মুখে লাগান এবং ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। তাহলে মুখ অনেক উজ্জ্বল দেখাবে। অ্যালোভেরা জেল মুখে জমে থাকা ময়লা গুলো দূর করতে সাহায্য করে।

অ্যালোভেরা জেল চুলে ব্যবহারের নিয়ম

আমরা মুখের সৌন্দর্যতা বৃদ্ধির জন্য এলোভেরা ব্যবহার করে থাকি। অ্যালোভেরা ত্বকে ব্যবহার করা ছাড়াও চুলের জন্য বেশ উপকারী। চুলে ব্যবহার করলে চুল অনেক সুন্দর হয়ে ওঠে। তবে শুধু এলোভেরা দিলেই হবে না এর সাথে অন্য কিছু যুক্ত করতে হবে। এবং এলোভেরা চুলে দেওয়ার সময় কিছু নিয়ম কানুন মানতে হবে। 

অ্যালোভেরা জেল এর সাথে সামান্য পরিমাণ অলিভ অয়েল যুক্ত করলে একটি মিশ্রণ তৈরি হবে।এই মিশ্রণের সাথে ডিমের কুসুম দিয়ে আরেকটি দ্রবণ তৈরি করে নিন। এবার দ্রবণটি চুলে লাগান।

লাগানোর পর ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর পানি দিয়ে চুল পরিষ্কার করে নিন। মাথার খুশকি দূর করার জন্য এলোভেরার সাথে মধু দিয়ে সেটি ব্যবহার করলে চুল খুশকি মুক্ত হবে।

এলোভেরা ও লেবু দিয়ে চুলের যত্ন

শুধু এলোভেরা দিয়ে চুল অনেক সুন্দর করা যায়। অ্যালোভেরা চুলে লাগালে চুল অনেক সুন্দর হয়ে ওঠে। চুলকে আরো মসৃণ বা সুন্দর করে তোলার জন্য অ্যালোভেরার সাথে লেবুর রস মিশাতে পারেন। এর ফলে একটি মিশ্রণ তৈরি হবে। এই মিশ্রণটি চুলে লাগানোর পর অন্তত ৩০ মিনিট চুলে রাখতে হবে। এর ফলে চুল লম্বা ও ঘন হওয়ার সাথে সাথে কোমল হয়ে ওঠে।

চুল ঘন করতে এলোভেরা

চুলকে শুধু লম্বা করলেই হয় না, ঘন করার প্রয়োজন আছে। চুল যদি ঘন না হয় তাহলে চুলের সৌন্দর্য নষ্ট হতে পারে। তাই চুলকে ঘন করতে এলোভেরা ব্যবহার করুন। তবে অ্যালোভেরার সাথে কিছু পরিমাণ অলিভ অয়েল দিয়ে দিতে হবে এবং এর সাথে আরো দিতে হবে মেথির গুঁড়া। এই উপাদান গুলোর মাধ্যমে একটি ভালো মিশ্রণ তৈরি হবে। তারপর এই মিশ্রণটি চুলে লাগাতে পারেন, বিশেষ করে গোড়ায় লাগান। পরবর্তীতে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

অ্যালোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা

রূপচর্চা থেকে শুরু করে রোগের ঔষধ পর্যন্ত এলোভেরা ব্যাপক জনপ্রিয়। কারণ এটি শুধু ত্বকের সৌন্দর্যের বৃদ্ধি করে না বরং এমন কিছু রোগ আছে সেগুলোর ক্ষেত্রে একটি মহা ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন সেরিয়াসিস একটি মারাত্মক রোগ, এই রোগের ঔষধ হিসেবে অ্যালোভেরা খুব কার্যকরী। তাই চলুন এলোভেরার কিছু উপকারিতা দেখে নিই।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি লাঘব করার জন্য এলোভেরা অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
  • চেহারার লাবণ্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য এলোভেরা বেশ কার্যকরী একটি উপাদান।
  • অনেকের বীর্য পাতলা হয়ে থাকে। বীর্যকে ঘন করে এই এলোভেরা।
  • চুল পড়া রোধে এলোভেরা ব্যাপক উপকারী একটি উপাদান। এলোভেরা চুল পড়া রোধে যেরকম সাহায্য করে, ঠিক তেমনি চুলকে করে তোলে নরম ও মসৃণ।
আরও পড়ুনঃ লটকন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এলোভেরা অত্যন্ত সহায়ক।
  • বর্তমান সময়ে আমরা ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ডায়েট অথবা ব্যায়াম ইত্যাদি করে থাকে। কিন্তু এলোভেরার জুস ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • ডায়াবেটিসের মাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য এলোভেরার জুস উপকারী।
    অপকারিতা সমূহ নিম্নরূপঃ
    যখন আমরা অ্যালোভেরা থেকে নরম অংশটি বের করি, সেই সময় ভুলবশত তার ভেতর থেকে অ্যালো ল্যাটেক্স নামক একটি পদার্থ রয়েছে যেটি বের হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এই অ্যালো ল্যাটেক্স দেহের মারাত্মক ক্ষতি করে। এটি অ্যালোভেরার পাতার ভেতরে অবস্থান করে। এটি দেখতে অনেকটা হলদে রংয়ের।

    ভুলক্রমে এটি যদি অ্যালোভেরার সঙ্গে কেউ খেয়ে ফেলে, তাহলে দেহে অনেক রোগ দেখা দেয়। তখন এটির প্রভাবে বিভিন্ন রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। পেট ব্যথাসহ ওজন হ্রাস, দুর্বলতা, ডায়রিয়া, কিডনি জনিত সমস্যা হতে পারে। এমনকি গর্ভবতী মায়ের সন্তান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশি।

    রূপচর্চায় অ্যালোভেরার উপকারিতা

    আমরা রূপচর্চায় বিভিন্ন ধরনের ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু রূপচর্চায় আমরা খুব কম অ্যালোভেরা ব্যবহার করে থাকি। কারণ হচ্ছে রূপচর্চায় অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই। কিন্তু রূপচর্চায় এলোভেরার উপকারিতা এতটাই বেশি যে, এটি ব্যবহারে ত্বক সুন্দর হয়ে ওঠে। উপকারিতা গুলো হচ্ছে-
    • ত্বকে যে বয়সের ছাপ পড়ে সেটি অনেকাংশে দূর হয়ে যায়।
    • ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে।
    • ত্বককে সতেজ করে তোলে।
    আরও পড়ুনঃ হরতকির উপকারিতা ও অপকারিতা
    • মুখের ব্রণ বা যেকোনো ধরনের কালো দাগ ভালো করে।
    • ত্বককে রোদে পুড়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
    • চুলকে লম্বা ঘন করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

    অ্যালোভেরা মুখে মাখলে কি হয়

    মুখের যত্নে এলোভেরা অনেক প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। অনেকের মুখ অনেক শুষ্ক প্রকৃতির হয়ে থাকে। অ্যালোভেরা জেল মুখের শুষ্কতা অপসারণ করে মুখকে সতেজ রাখে। মুখে যদি কোন কালো দাগ থাকে তাহলে সেটি দূর হয় এই অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারের মাধ্যমে। এমনকি ব্রন সমস্যায় সাহায্য করে। অনেক সময় কাজের ক্ষেত্রে আমাদের বাইরে বের হতে হয়। 

    এই সময় আমাদের রোদে ঘোরাঘুরির জন্য ত্বক অনেক সময় রোদে পুড়ে যাই। ত্বকের এই পুড়াভাবটা তোলার জন্য এলোভেরা জেল অত্যন্ত কার্যকরী। এগুলো ছাড়াও ত্বকের আরও বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে এই অ্যালোভেরা।

    এলোভেরা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়

    ফর্সা হতে কে না চায়? ফর্সা হওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের পণ্য ব্যবহার করে থাকি। অনেকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে থাকে। কিন্তু আমরা ঘরোয়াভাবে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে ফর্সা হতে পারি। এক্ষেত্রে এলোভেরা ব্যবহার করতে পারি। এলোভেরা দিয়ে ফর্সা হওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। অর্থাৎ অ্যালোভেরার সাথে বিভিন্ন উপাদান যুক্ত করে এটি ব্যবহার করা হয়। যেমন
    • নিম পাতা বেটে যে রস বের হবে সেই রস এক চামচ এবং এলোভেরা জেল যুক্ত করে দ্রবণ তৈরি করুন এবং সেই দ্রবণটি মুখে ব্যবহার করুন। ১০ মিনিট রাখার পর পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। তাহলে ত্বক ফর্সা হয়ে উঠবে।
    আরও পড়ুনঃনিম পাতা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
    • অ্যালোভেরা ও মধু একসঙ্গে ব্যবহার করেও ত্বকের অনেক উপকার পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে মধু ১ চামচ এবং অ্যালোভেরা ২ চামচ নিতে হবে। এই দুটি উপাদান একসঙ্গে যুক্ত করে মিশ্রণ তৈরি করুন। মিশ্রণটি অন্তত 10 মিনিট মুখে দিয়ে রাখুন। এবং পরে সেটি শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। এতে করে মুখের তৈলাক্ততা দূর হবে এবং ফর্সাও হবে।
    • এলোভেরা জেল এবং টমেটোর রস একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করার ফলে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।

      শেষ কথা

      অবশেষে, অ্যালোভেরা আমাদের দেহের বা ত্বকের জন্য কতটা যে উপকারী একটি উপাদান সেটি আমরা বুঝতে পারলাম। অ্যালোভেরা শুধু মেয়েদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয় বরং এটি ছেলেদের রূপচর্চার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই আলোচনার মাধ্যমে অবশ্য বুঝতে পেরেছেন যে, রূপচর্চায় অ্যালোভেরার ব্যবহার কিভাবে করতে হবে, এলোভেরা ব্যবহার করে কিভাবে ফর্সা হওয়া যায়, চুল কিভাবে ঘন করা যায় ইত্যাদি।

      তাই আশা করি উপরের আর্টিকেলটি পড়ে অ্যালোভেরার সকল গুনাগুন এবং উপকারিতা এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে এলোভেরার উপকারিতা কতটুকু রয়েছে ইত্যাদি সকল বিষয়ে খুঁটিনাটি জানতে পেরেছেন। আর আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করে দিন। ধন্যবাদ।
      বিঃদ্রঃ তবে সকল কিছু ব্যবহার বা খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
      Next Post Previous Post
      No Comment
      Add Comment
      comment url