আখের গুড়ের শরবত খাওয়ার উপকারিতা-আখের গুড় খেলে কি ওজন বাড়ে
আসসালামু আলাইকুম। আজকে যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি
বিষয়। আজকে আখের গুড় সম্পর্কে আলোচনা করব। আজকের আলোচনার প্রধান উপজীব্য বিষয়
হচ্ছে আখের গুড় খেলে কি ওজন বাড়ে না কমে এবং আখের গুড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
হয়তো অনেকে জানে না আখের গুড়ের গুনাগুন সম্পর্কে।
তাই যাদের, আখের গুড় সম্পর্কে ধারণা নেই তাদের জন্য আজকের এই আলোচনা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। এই আর্টিকেলে আখের গুড় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা
করার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ। সুতরাং আখের গুড় খেলে কি ওজন বাড়ে না কমে ইত্যাদি
বিষয়গুলো জানার জন্য এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে।
পেজ সূচিপত্রঃ আখের গুড় খেলে কি ওজন বাড়ে-আখের গুড় খাওয়ার নিয়ম
ভূমিকা
আখের গুড়ের সাথে আমরা মোটামুটি ভাবে সবাই পরিচিত। সাধারণত আখ থেকে আখের গুড়
তৈরি করা হয়। শীতকালে গুড়ের ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। কারণ শীতকালে বিভিন্ন
পিঠাপুলি বেশি তৈরী করা হয়। এসব পিঠাপুলি খাওয়ার জন্য গুড় ছাড়া জমে উঠে না। এই
গুড়ে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ উপস্থিত। এই গুড়ে ফসফরাস,
ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, কোলিন কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি উপাদান বিদ্যমান। এছাড়াও
আখের গুড়ে শর্করা এবং ক্যালরি রয়েছে। এই গুড় খাওয়ার উপকারিতা ও অনেক রয়েছে।
এবং এই গুড় স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান।
বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি
ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে।
এই আখের গুড় আবার ডায়রিয়া রোগীকে স্যালাইন করে খাওয়ানো হয়। তাই আখের গুড়ের
উপকারিতা এবং আখের গুড় খেলে কি ওজন বাড়ে না কমে ইত্যাদি বিষয়ে জানার জন্য
আমাদের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত থাকুন।
আখের গুড়ের শরবত খাওয়ার উপকারিতা
প্রিয় পাঠক এ পর্যায়ে আমরা জেনে নিব আখের গুড়ের শরবত খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি
কি রয়েছে সেই সম্পর্কে। আখের গুড় খেলে যেমন উপকার রয়েছে তেমনি আখের গুড়ের
শরবত খেলেও অনেক উপকার রয়েছে। আখের গুড়ের শরবত স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই কার্যকরী
একটি উপাদান। এই গুড়ের শরবত খেলে যে সকল উপকার পাওয়া যায় সেগুলি হচ্ছেঃ
- গরমের সময় আখের গুড়ের শরবত শরীরে প্রশান্তি এনে দেয়।
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- শরীরে যে ক্ষতিকর টক্সিন থাকে সেগুলো বের করতে সাহায্য করে।
- শরীরের যে তাপমাত্রা রয়েছে সেই তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখে।
- সর্দি কাশি কিংবা ঠান্ডা লাগলে দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ রয়েছে তাদের জন্য খুবই উপকারী এই আখের গুড়ের শরবত।
- ডায়রিয়া হলে আখের গুড়ের শরবত স্যালাইন করে খেলে খুবই উপকার পাওয়া যায়।
- গরমের সময় যখন গলা শুকিয়ে যায় তখন আখের গুড়ের শরবত খেলে খুবই শান্তি পাওয়া যায়।
সুতরাং উপরোক্ত উপকারিতা গুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের উপকার পাওয়া যায় এই
আখের গুড়ের শরবত খেলে। তাই দেখা যাচ্ছে আখের গুড়ের শরবতের উপকারিতা অনেক।
আখের গুড়ের উপকারিতা
আখের গুড়ের উপকারিতা বলে শেষ হওয়ার নয়। কারণ আখের গুড়ের উপকারিতা ব্যাপক।
আখের গুড় শুধু স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয় বরং এটি বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রেও
ব্যবহার করা হয়। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার সাথে সাথে
ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে স্যালাইন কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগেও ব্যবহার করা হয়। তাই
চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক আখের গুড়ের উপকারিতা কি কি।
- রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে আখের গুড় খুবই কার্যকরী অবদান রাখে।
- গরমকালে শরীর ঠান্ডা রাখতে এর ভূমিকা অনেক।
- শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন দূর করতে খুবই কার্যকরী।
- হালকা গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে সর্দি কাশির ক্ষেত্রে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ মিষ্টি খাওয়ার উপকারিতা
- যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তারা আখের গুড় খেলে অনেক উপকার পেয়ে থাকে।
- অ্যানিমিয়া উপশমে আখের গুড় খুবই কার্যকরী।
- কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করার ক্ষেত্রে আখের গুড় খুবই উপকারী একটি উপাদান।
- মাথাব্যথা দূর করতে দারুন কাজ করে এই গুড়।
- ভিটামিন এবং মিনারেলের ভালো উৎস হচ্ছে এই গুড়।
সুতরাং উপরোক্ত অপকারিতা গুলো পাওয়া সম্ভব আখের গুড় খেলে। আখের গুড়ে ওপরের
উপকারিতা গুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন উপকার পাওয়া যায়। এই উপকারিতা গুলো
স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
আখের গুড় খাওয়ার অপকারিতা
প্রিয় পাঠক এ পর্যায়ে আমরা জানবো আখের গুড় খেলে যে সকল অপকারিতা রয়েছে সেই
সম্পর্কে। আখের গুড় খাওয়ার উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতাও রয়েছে। কিন্তু এই
অপকারিতাগুলো কি কি সে সম্পর্কে অনেকে ধারণা নেই। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক আখের
গুড় খাওয়ার অপকারিতা সমূহ কি কি।
- যারা অতিরিক্ত আখের গুড় খেতে চাই তাদের ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- আখের গুড় খাওয়ার আরো একটি অপকারিতা হচ্ছে রক্তের শর্করার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
- আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা গরমের দিন অতিরিক্ত গুড় খেলে নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।
- হজমের সমস্যাও দেখা দিতে পারে এই আখের গুড় খাওয়ার ফলে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আখের গুড় খাওয়ার ফলে উপরোক্ত সমস্যা গুলো দেখা দিতে পারে।
এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে এ আখের গুড় খাওয়ার ফলে। তাই আমাদের
যে কোন জিনিস সতর্কতার সাথে বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত।
আখের গুড় চেনার উপায়
হাট বাজারে প্রায়ই আখের গুড় দেখতে পাওয়া যায়। আবার অনেকেই হাট বাজার থেকে
আখের গুড় ক্রয় করে থাকে। কিন্তু আমরা কি জানি কোন গুড় আসল আর কোন গুড় নকল?
তাই আসল আখের গুড চেনার কিছু পদ্ধতি রয়েছে। তবে গুড় কেনার সময় অবশ্যই একটু
খেয়ে দেখবেন। আর এই খাওয়ার সময় যদি নোনতা লাগে তাহলে বুঝবেন গুড়ে ভেজাল
রয়েছে। গুড় চেনার আরো একটি উপায় হচ্ছে এক টুকরো গুড় নিন এবং গ্লাসে পানি
নিয়ে সে পানির মধ্যে গুড়ের টুকরোটি দিয়ে দিন। যদি আস্তে আস্তে গলতে শুরু করে
তাহলে বুঝবেন এটি আসল এবং গুড়টি যদি গ্লাসের সঙ্গে লেগে যায় তাহলে বুঝবেন এটি
নকল।
আবার গুড় দেখতে যদি বেশি চকচকে হয় তাহলে সেটাতে চিনি মেশানো হয়েছে বলে মনে করা
হয়। আর গুড় যদি বেশি নোনতা হয় তাহলে বুঝবেন এই গুড়টি অনেক পুরনো গুড়। আবার
গুড় যদি একটু তেতো লাগে তাহলে বুঝবেন গুড়ে অনেক জ্বাল পড়েছে। এই কারণেই একটু
তেতো হয়ে গেছে। আবার গুড় কেনার সময় অবশ্যই গুড়ের রং দেখে নেবেন। গুড়ের রং
যদি গাঢ় বাদামী হয় তাহলে সেটি অনেক ভালো। কারো বাদামী না হলে বুঝবেন সেই গুড়ে
ভেজাল রয়েছে।
আখের গুড় খেলে কি ওজন বাড়ে
প্রিয় পাঠক এবার আমরা জেনে নিব আখের গুড় খাওয়ার ফলে ওজন বাড়ে না কমে এই
সম্পর্কে। এই বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের অনেকের ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। আখের গুড়ে
প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে। এই ক্যালোরি দেহের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
তাহলে বোঝা যাচ্ছে আখের গুড় ওজন বাড়াতে সক্ষম। তাই যাদের ওজন বেশি তারা একটু
সতর্কতার সাথে গুড় খাওয়া উচিত।
আরও পড়ুনঃ কমলার খোসার উপকারিতা
অর্থাৎ অতিরিক্ত আখের গুড় খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কিন্তু আখের গুড়ের
উপকারিতা অনেক রয়েছে, যা উপরে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু এই
উপকারিতার পাশাপাশি কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেহের ক্ষতি হয়ে থাকে। সুতরাং আমরা
স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম আখের গুড় খেলে ওজন বাড়ে কিনা।
গুড় খেলে কি ওজন কমে
গুড় খেলে ওজন কমে কিনা এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত। আমরা উপরের আলোচনায়
জেনেছি আখের গুড় খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। কিন্তু গুড় খেলে দেহের অনেক উপকার
হয়। চিনির চায়ের চেয়ে গুড়ের চা অনেক উপকারী। কারণ এটি প্রাকৃতিক মিষ্টি। তাই
এর উপকারিতা অনেক বেশি। গুড় ও লেবু ওজন কমাতে খুবই উপকারী উপাদান।
এই গুড় হজমে
সাহায্য করে এবং এতে প্রোটিন, ফাইবারসহ বিভিন্ন ধরনের উপাদান বিদ্যমান যা ওজন
কমানোর ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী। অন্যদিকে লেবুতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা
শরীরের চর্বি কমানোর ক্ষেত্রে খুবই উপকারী। তাই গুড় এবং লেবুর পানীয় ওজন কমানোর
ক্ষেত্রে সাহায্য করে থাকে।
আখের গুড় খাওয়ার নিয়ম
আমরা সকলে আখের গুড়ের সাথে পরিচিত এবং সকলেই খেয়ে থাকি। এই আখের গুড় বিভিন্ন
জন বিভিন্নভাবে খেয়ে থাকে। কেউ চায়ের সাথে আবার কেউ রুটির সাথে খেয়ে থাকে।
বিশেষ করে শীতকালে এ গুড়ের চাহিদা বেড়ে যায়। কারণ শীতকালে বিভিন্ন রকম পিঠা
পুলি তৈরি করা হয়। যা গুড় ছাড়া কল্পনা করা যায় না। এসব পিঠাপুলি তৈরিতে গুড়
বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুনঃ ভাপা পিঠা বানানোর নিয়ম
আবার চায়ে চিনির পরিবর্তে গুড় ব্যবহার করে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। আবার
এই গুড় দিয়েই কেউ ক্ষীর, মিষ্টি ইত্যাদি তৈরি করে। সুতরাং একেক জন একেক রকম
নিয়মে খেয়ে থাকে। তারপর এই গুড় দিয়েই সুঘ্রাণ পায়েস তৈরি করা হয় যা খেতে
অনেক সুস্বাদু।
গুড় খেলে কি সুগার হয়
প্রিয় পাঠক এবার আমরা জেনে নেব গুড় খেলে সুগার হয় কিনা এই সম্পর্কে। গুড় উচ্চ
রক্তচাপ কমাতে খুবই সহায়ক। গুড় যেহেতু প্রাকৃতিক মিষ্টি তারপরও এটি ডায়াবেটিস
রোগীদের থেকে দূরে রাখা উচিত। কারণ এতে সুক্রোজের পরিমাণ বেশি রয়েছে । তাই যাদের
ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের জন্য এটি খুবই বিপদজনক। আর ডায়াবেটিস রোগীরা যদি গুড়
খেয়ে থাকে তাহলে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং এই আলোচনার
মাধ্যমে আমরা স্পষ্ট যে গুড় খেলে সুগার হয় কিনা এই বিষয়ে।
আখের ঝোলা গুড়
আখের ঝোলা গুড়ের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এই গুড় অনেক সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর
একটি খাদ্য। আখের ঝোলা গুড় মিষ্টি জাতীয় এবং একটি জনপ্রিয় খাবার। এই গুড়
ভিটামিন এবং প্রোটিনে ভরপুর রয়েছে।
আখের গুড়ের দাম ২০২৩
এই আখের দাম সম্পর্কে অনেকেই চিন্তা ভাবনা করে থাকেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এক মন
আখের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২২০ টাকা এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সেটির দাম নির্ধারণ
করা হয়েছে ২৪০ টাকা।
আরও পড়ুনঃ দাদ রোগের ঔষধ সম্পর্কে জানুন
লেখকের মন্তব্য বা শেষ কথা
পরিশেষে, আখের গুড়ের উপকারিতার গুরুত্ব অপরিসীম। আর এ আখের গুড় বিভিন্ন রকম
রোগের ক্ষেত্রে ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পাশাপাশি কিছু অপকারিতা রয়েছে। আর
এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম আখের গুড় খেলে কি ওজন বাড়ে না কমে, আখের
গুড় খাওয়ার নিয়ম এবং আখের গুড়ের দাম সম্পর্কে।
তাই আশা করি আখের গুড় খেলে ওজন বাড়ি কিনা সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন এবং
উপকৃত হয়েছেন। তাই উপকৃত হয়ে থাকলে পোস্টটি সবার সাথে শেয়ার করে দিন। সুস্থ
থাকুন, ভালো থাকুন। অসংখ্য ধন্যবাদ