মুখে ঘামাচি মত হলে করণীয়-ঘামাচি দূর করার প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে জানুন
আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আজকে আলোচনা করা হবে ঘামাচি
দূর করার প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে। এই ঘামাচি হলে অস্বস্তিকর অনুভূত হয়। তাই এই
অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে সবাই মুক্তি পেতে চাই। কিন্তু অনেকেই ঘামাচি দূর করার
উপায় সম্পর্কে জানেনা।
তাই যারা এই উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে চান তাদের জন্য এই
আর্টিকেল খুবই সহায়ক হবে। আর এই উপায় গুলো বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেল
সম্পূর্ণ পড়তে হবে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ঘামাচি দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
সম্পর্কে।
পেজ সূচিপত্রঃ ঘামাচি দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
ভূমিকা
এই ঘামাচি প্রায় লোকের হয়ে থাকে। সাধারণত গরমের সময় এই ঘামাচি বেশি দেখা যায়।
এই ঘামাচি হলে চুলকানি শুরু হয়ে যায় এবং বিভিন্ন জায়গায় লাল লাল দাগ দেখা
যায়। এই ঘামাচি সাধারণত ঘাড়, পিট, কাঁধ ইত্যাদি জায়গায় দেখা যায়। যেহেতু এই
ঘামাচি প্রচন্ড গরমের সময় হয়, আর এই সময় মানুষ অতিরিক্ত ঘামে। যারা প্রচুর
পরিমাণে ঘামে এবং গরমে কাজ করে থাকে তাদের ঘামাচি বেশি হয়ে থাকে। তবে অনেকের
মুখেও ঘামাচি হতে দেখা যায়। এই ঘামাচি থেকে বাঁচার জন্য অনেকেই বিভিন্ন ধরনের
প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু এই প্রসাধনী ত্বকের জন্য উপকারী নাও হতে পারে। আবার এই ঘামাচি ত্বকের
সৌন্দর্য নষ্ট করে দিতে পারে। এই ঘামাচি হওয়ার পিছনে কিছু কারণ রয়েছে।
এই
ঘামাচি ছোট বড় সকলের হতে পারে। তাই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু
টিপস অনুসরণ করতে হবে। যেহেতু ঘামাচি গরমকালে বেশি হয় সেহেতু সেই সময় ঢিলেঢালা
পোশাক পরিধান করা উচিত, যাতে করে বাতাস ঠিকমতো আসা-যাওয়া করতে পারে। তাই এই ঘামাচি থেকে মুক্তির জন্য পূর্বেই সতর্ক হওয়া উচিত। আবার আরো কিছু উপায়
রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করলে এই ঘামাচি থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে। এই উপায় গুলো
সম্পর্কে আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাই সম্পূর্ণ জানতে এই আর্টিকেল
গুরুত্ব সহকারে পড়ুন।
ঘামাচি দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
প্রিয় পাঠক এ পর্যায়ে আমরা জানবো ঘামাচি দূর করার প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে।
বেশি গরম পড়লে সাধারণত শরীরে ঘামাচি দেখা যায়। এই গরমে একদিকে গরমের সমস্যা
অন্যদিকে ঘামাচির সমস্যা। যাদের শরীরে বেশি ঘাম হয় সাধারণত তাদের ক্ষেত্রেই
ঘামাচি বেশি দেখা যায়। কিন্তু এই ঘামাচি থেকে সবাই মুক্তি পেতে চাই। তাই চলুন
জেনে নেওয়া যাক এই ঘামাচি থেকে মুক্তির কি উপায় রয়েছে সেই সম্পর্ক।
- ঘামাচি দূর করার ক্ষেত্রে নিমপাতা খুবই কার্যকরী। এই নিম পাতার রস ঘামাচি দূর করার ক্ষেত্রে খুবই সহায়ক। এই নিম পাতার রসের সাথে গোলাপ জল মিশিয়ে ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
- আবার অ্যালোভেরা ঘামাচি দূর করার জন্য খুবই উপকারী। এক্ষেত্রে অ্যালোভেরার রস ঘামাচির ওপর লাগালে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
- মুলতানি মাটি অনেক উপকারী একটি মাটি। এই মাটির সাথে যদি গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট করা হয় এবং সেই পেস্ট ব্যবহার করা হয়। কিছুক্ষণ পর সেটি পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলে দিন।
- আবার বেকিং সোডা ঘামাচি দূর করার ক্ষেত্রে অধিক কার্যকরী।
- যখন বৃষ্টি হয় সেই বৃষ্টিতে ভিজতে পারেন। কারণ বৃষ্টির পানিও ঘামাচি দূর করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
- যতদূর সম্ভব গরম আবহাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। ঘরের জানালা দরজা খুলে রাখুন, যেন বাতাস সহজে চলাচল করতে পারে এবং ঘর ঠান্ডা থাকে।
আরও পড়ুনঃ অতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচার উপায়
- ঘামাচির জায়গায় ঘষলে আরাম পাওয়া যায়।
- লেবুর রস আমরা অনেকে ভাতের সঙ্গে খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা জানি না এই লেবুর রস ঘামাচি দূর করতে সাহায্য করে।
- আবার বেসন আমরা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকি। অনেকের রান্না করে এই উপকরণটি পাওয়া যাবে। এই বেসন পানির সাথে মিশিয়ে পেস্ট করে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- আলু খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আলু রূপ চর্চার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু এই আলু ঘামাচিতে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।
- আবার এই আদার পানি ঘামাচি দূর করার ক্ষেত্রে অনেক উপকারী।
- শসা রূপচর্চার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হলেও ঘামাচির চুলকানি দূর করতে খুবই সহায়ক।
বিঃদ্রঃ তবে উপরোক্ত উপায়গুলোর ব্যবহার করার পূর্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ
গ্রহণ করুন। আর যদি ঘামাচি থেকে পুঁজ বের হয়, তাহলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের
চিকিৎসা গ্রহণ করুন এবং সুস্থ থাকুন।
বাচ্চাদের ঘামাচি দূর করার উপায়
গরমকালে বড়দের সাথে সাথে বাচ্চারা অনেক কষ্ট পাই। সাধারণত এই গরমকালে দেখা যায়
অনেক বাচ্চারা ঘামাচির সমস্যায় ভোগে থাকেন। এই ঘামাচি হলে ত্বক চুলকায় এতে করে
তাদের কষ্ট হয়ে থাকে। যেকোনো বয়সের শিশুদের এই ঘামাচি হতে পারে। তাই এই
ঘামাচিকে দূর করার জন্য কিছু করণীয় রয়েছে।
- খরতাপ থেকে যত সম্ভব দূরে থাকা উচিত। পোশাকের দিকে নজর দিতে হবে। শিশুর গায়ের পোশাক কিছুক্ষণ খুলে রাখতে পারেন।
- আবার পোশাক খুব ঢিলেঢালা পরানো উচিত। আবার ঘরের দরজা জানালা খুলে রাখতে হবে। যাতে করে বাতাস সহজে প্রবেশ করতে পারে।
- আবার এই ঘামাচি অনেক সময় লাল হয়ে যায়। যখন এরকম উপসর্গ দেখা দেয় তখন দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
- অনেকেই ঘামাচি দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্রিম ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু কখনোই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ক্রিম ব্যবহার করা উচিত হবে না। সেজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্রিম ব্যবহার করা উচিত।
- অনেক সময় দেখা যায় রুমের তাপমাত্রা খুব বেশি পরিমাণ থাকে। এই তাপমাত্রা যেন অতিরিক্ত না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।
আরও পড়ুনঃ মাথার খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায়
- যে জায়গাগুলোতে ঘাম বেশি জমে থাকে সেই স্থানগুলো যাতে শুকনো থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- বাজারে বেবি ট্যালকম পাউডার কিনতে পাওয়া যায়। এই পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে এবং উপকার পাওয়া যেতে পারে।
- যদি ফোড়া হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
- যদি শরীর ঘন ঘন ঘামে তাহলে সেক্ষেত্রে ভিজা কাপড় দিয়ে মুছা যেতে পারে।
তবে শিশুদের শরীরে কিছু ব্যবহার করার পূর্বে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ
গ্রহণ করুন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
বড়দের মাথায় ঘামাচি হলে করণীয়
প্রিয় পাঠক এ পর্যায়ে আমরা জানবো বড়দের মাথায় ঘামাচি হলে সে ক্ষেত্রে কি
করণীয় রয়েছে সে সম্পর্কে। এই ঘামাচির সমস্যাটা সাধারণত গরমের সময় বেশি হয়ে
থাকে। অনেকে গরমের সময় প্রচুর ঘেমে থাকে। অতিরিক্ত ঘামার কারণে এই ঘামাচি হতে
পারে। ছোট বড় সবার ক্ষেত্রে এই ঘামাচি হতে পারে। ঘামাচি হলে অনেক অস্বস্তিকর
অবস্থায় পড়তে হয়।
আরও পড়ুনঃ স্বামীকে খুশি করার উপায়
এই ঘামাচি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হয়ে থাকে। এই ঘামাচি দূর করার বিভিন্ন উপায়
সম্পর্কে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। তবে ঘামাচি হলে সেক্ষেত্রে করনীয় কি এই বিষয়ে
বিস্তারিত জানার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ গ্রহণ করুন।
মুখে ঘামাচি কেন হয়
সাধারণত অনেকের মুখে ঘামাচি হতে দেখা যায়। মুখে ছাড়াও শরীরের আরও বিভিন্ন
জায়গায় এই ঘামাচি হতে পারে। বিশেষ করে কোমর, পিঠ, হাঁটুর ভাজে ইত্যাদি জায়গায়
ঘামাচি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। গরমকালে মানুষ এই ঘামাচিতে আক্রান্ত বেশি হয়ে
থাকে। আর এই ঘামাচি হলে অস্বস্তিকর চুলকানি তৈরি হয়। এই ঘামাচি হওয়ার পেছনে
কারণ রয়েছে।
শরীরের লোমকূপ দিয়ে ঘাম বের হয়ে থাকে। এই ঘামের মাধ্যমে শরীরের দূষিত পদার্থ
বের হয়। এই লোমকূপ যদি বন্ধ হয় তাহলে ঘাম আর বের হতে পারে না তখন ঘামাচি তৈরি
হয়। তবে ঘামাচি কেন হয় বা মুখে ঘামাচি কেন হয় এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ
করুন।
মুখে ঘামাচি মত হলে করণীয়
যদি ঘামাচি হয় সেক্ষেত্রে কিছু করণীয় রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করলে ভালো ফলাফল
পাওয়া যায়। শরীরে যদি ঘাম বেশি হয় সে ক্ষেত্রে নরম কাপড় পরিধান করতে হবে এবং
ঘামা শরীর রুমাল বা তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলতে হবে। অনেকের আবার মাথার চুলের
গোড়ায় ঘাম হয়ে থাকে। তাই ইনফেকশন যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং
চুলের শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ অতিরিক্ত ঘুম কোন রোগের লক্ষণ
তবে ঘামাচি স্থানে নখ দিয়ে না চুলকানোই ভালো। এতে করে ইনফেকশন হতে পারে। ভেজা
নরম কাপড় দিয়ে আক্রান্ত স্থান মুছলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। আবার ট্যালকম
পাউডার ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
তবে ঘামাচি হলে কি ব্যবহার করা যাবে আর কি ব্যবহার করা যাবে না সে জন্য বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। আবার ঘামাচি হলে কি কি করণীয় রয়েছে সেজন্য
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
লেখকের মন্তব্য
পরিশেষে, আসলে ঘামাচি হলে অনেক বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। তাই এই আর্টিকেলে
ঘামাচি দূর করার প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি আরো
আলোচনা করা হয়েছে বাচ্চাদের ঘামাচি দূর করার উপায়, মুখে ঘামাচি কেন হয় ইত্যাদি
সম্পর্কে।
আশা করি এ আর্টিকেল পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এই
আর্টিকেল বেশি বেশি শেয়ার করে দিন। এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য
ধন্যবাদ।