হরতকির উপকারিতা ও অপকারিতা-হরতকির ব্যবহার সম্পর্কে জানুন

আসসালামু আলাইকুম। আজকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। বিষয়টি হচ্ছে হরতকির উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে। আমরা সবাই হরতকির নাম শুনেছি কিন্তু এর গুনাগুন সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই। হরতকি অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। আজকে এ আর্টিকেলে হরতকির সকল গুনাগুন সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। 
হরতকির উপকারিতা ও অপকারিতা
তাই যাদের হরতকির গুনাগুন সম্পর্কে ধারণা নেই তাদের জন্য এই আর্টিকেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং হরতকির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে এই আর্টিকেল সম্পূর্ণ পড়তে হবে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক হরতকির গুনাগুন সম্পর্কে।

পেজ সূচিপত্রঃ হরতকির উপকারিতা ও অপকারিতা-হরতকির ব্যবহার সম্পর্কে জানুন

ভূমিকা

হরতকি একটি অতি পরিচিত ফল। এটি ঔষধি ফল হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। এটি বিভিন্ন গুণে ভরপুর একটা ফল। হরতকি গাছ মাঝারি এবং লম্বা দুটোই হয়ে থাকে। হরতকির ফুল সাদা এবং হলুদ দুটোই দেখতে পাওয়া যায়। হরতকি খেতে তিতা ধরনের হয়ে থাকে। কিন্তু এই ফলটি অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর। হরতকি ফলকে মহা ঔষধি হিসেবে গণ্য করা হয়। আগে এই গাছ বনাঞ্চলে দেখতে পাওয়া যেত। কিন্তু এখন এটি বাড়ির আঙ্গিনায় অনেকে লাগিয়ে থাকে। বাজারে হরতকি প্যাকেট আকারে পাওয়া যায়। 

তবে হরতকির শুধু ফল নয়, এর পাতা বীজ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই হরতকি ট্যানিন ,অ্যামাইনো অ্যাসিড ইত্যাদি সমৃদ্ধ একটি ফল। অনেক রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি দেহের জন্য যেমন উপকারী তেমনি বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রেও বিশেষ কার্যকরী। এটি অন্ত্র পরিষ্কার করার সাথে সাথে দেহে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। হরতকি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে। 

শুধু কোষ্ঠকাঠিন্য নয়, যাদের ওজন অনেক বেশি তাদের ক্ষেত্রেও অনেক উপকারী। আবার হাঁপানি রোগে হরতকি খুবই উপকারী। আবার যাদের রুচি নেই তাদের জন্য এই হরতকি খুবই ভালো ফলাফল দেয়। অর্থাৎ রুচি বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। শুধু রোগের ক্ষেত্রে নয় এটি ত্বককে ভালো রাখার ক্ষেত্রে খুবই ফলপ্রসু।

এই হরতকি পাউডার করে অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়। তাই হরতকি সম্পর্কে উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের বিষয় রয়েছে যেগুলো জানার জন্য এই আর্টিকেল শেষ পর্যন্ত গুরুত্বসহকারে পড়তে হবে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক হরতকির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং হরতকির ব্যবহার সম্পর্কে।

হরতকির উপকারিতা

প্রিয় পাঠক এ পর্যায়ে আমরা জানবো হরতকির উপকারিতা সম্পর্কে। হরতকির উপকারিতা অনেক রয়েছে। এই হরতকি যেমন অন্ত্রের খিচুনি কমাতে সাহায্য করে, তেমনি রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী। এগুলো ছাড়া আরো রয়েছে বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা। এই উপকারিতা গুলো সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
  • হরতকি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
  • শুধু কোষ্ঠকাঠিন্য নয় অ্যালার্জি দূর করার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী।
  • অনেকের মুখে ব্রণ হওয়ার কারণে দাগ হয়ে যায়। এই দাগ দূর করতে হরতকি সাহায্য করে।
  • নারিকেল তেলের সঙ্গে হরতকির গুঁড়া মিশিয়ে তা ফোটাতে হবে এবং সেটি চুলে ব্যবহার করলে চুল ভালো থাকে।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে হরতকি বিশেষ ভূমিকা রাখে।
  • হরতকি গাছের গুঁড়ার সাথে যদি মধু মিশিয়ে শিশুদের খাওয়ানো হয় তাহলে শিশুদের সর্দি-কাশি দ্রুত ভালো হয়।
  • যদি দাঁতে ব্যথা থাকে তাহলে হরতকির গুঁড়া ব্যবহার করলে সেই ব্যাথা থেকে উপশম পাওয়া যায়।
  • সর্দি কাশি উপশমে হরতকি বিশেষ ভূমিকা রাখে।
  • সেক্সুয়াল হেলথ মজবুত করার ক্ষেত্রে হরতকি সাহায্য করে।
  • দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকরী এই হরতকি।
  • হাটুর ব্যথা এবং গাঁটের ব্যথা উপশমে হরতকি ভালো ফলাফল প্রদান করে।
  • অনেক সময় চোখ দিয়ে পানি ঝরে এমনকি চোখ লাল হয়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানে হরতকি বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
  • হরতকি পানিতে ফুটিয়ে সে পানি দিয়ে গারগোল করলে গলা ব্যথা ভাল হয়।
  • যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তাদের এই হজমের সমস্যা দূর করে হজম ক্ষমতা বাড়ায়।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে হরতকি খাওয়ার উপকারিতা অনেক। আর উপরোক্ত উপকারিতা গুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে এই হরতকিতে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

হরতকির অপকারিতা

হরতকির উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতা রয়েছে। তবে এর অপকারিতার চাইতে উপকারিতা অনেক বেশি। তবে হরতকি কখনোই বেশি পরিমাণ খাওয়া উচিত নয়। এতে করে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। চলুন কয়েকটি অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই।
  • হরতকি অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা থাকে। ঠান্ডা লেগে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় হরতকি না খাওয়াই উচিত। কারণ গর্ভাবস্থায় হরতকি খেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
  • যদি কেটে যায় বা আঘাত লাগে তবে সেখানে অযথা হরতকি দেওয়া উচিত নয়।
  • যদি অতিরিক্ত পরিমাণ হরতকির গুঁড়া খাওয়া হয় তাহলে পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণ হরতকি খেলে হজমে সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপরোক্ত অপকারিতা গুলো ছাড়াও আরো বেশ কিছু অপকারিতা রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। তবে হরতকি খাওয়ার সময় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। আর হরতকি খেলে অবশ্যই চিকিৎসকের বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করে খাওয়া উচিত।

চুলে হরতকির ব্যবহার

প্রিয় পাঠক এ পর্যায়ে আমরা জেনে নিব চুলে হরতকি ব্যবহার করলে কি কি উপকার পাওয়া যায়। চুলে হরতকির ব্যবহার সম্পর্কে অনেকের ধারণা নেই। চুলে হরতকি ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। চলুন জেনে নিন চুলে হরতকি ব্যবহার করলে কি কি উপকার পাওয়া যায়।
  • যাদের চুল ছোট রয়েছে তারা চুলে হরতকি ব্যবহার করলে চুল লম্বা হয়।
  • চুল গজানোর ক্ষেত্রে হরতকি খুবই কার্যকরী।
  • যাদের চুল পড়ার সমস্যা রয়েছে তারা হরতকি ব্যবহার করলে অনেকাংশে চুল পড়া কমে যায়।
  • অনেকের মাথায় খুশকির সমস্যা থাকে। যাদের মাথায় খুশকির সমস্যা রয়েছে তারা হরতকি ব্যবহার করলে খুশকি দূর হয়।
  • চুল ঘন করতে সাহায্য করে।
  • চুল অনেক মজবুত করে।
  • হরতকি প্রাকৃতিক শ্যাম্পুর মতো কাজ করে।
  • চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

হরতকি খাওয়ার উপকারিতা

এবার আমরা জেনে নিব হরতকি খেলে যে সকল উপকার পাওয়া যায় সেই সম্পর্কে। আসলে হরতকি খেলে যে সকল উপকার গুলো পাওয়া যায় সে সম্পর্কে অনেকের ধারণা নেই। অনেকেই জানে না হরতকি খেলে কি উপকার পাওয়া যায়। তাই আজকে এই আলোচনার মাধ্যমে জেনে নিব সেই উপকারিতা গুলো সম্পর্কে। উপকারিতা গুলো হচ্ছেঃ
  • সুস্থ থাকার জন্য হজম ক্ষমতা ভালো থাকা খুবই জরুরী। আর সেই হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এই হরতকি।
  • যারা ওজন কমাতে চান তারা হরতকি খেতে পারেন। কারণ হরতকি ওজন কমাতে খুবই সাহায্য করে।
  • যখন বয়স বৃদ্ধি পায় তখন শরীরে বিভিন্ন ধরনের ব্যথা হয়। যদি হরতকি খাওয়া হয় তাহলে এই ব্যথা থেকে উপশম পাওয়া যায়।
  • স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে হরতকি বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এই হরতকি।
  • চোখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করে এবং চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
  • হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এই হরতকি।
  • অনেকে দাঁতের ব্যথার সমস্যায় ভোগেন। এই দাঁতের ব্যথার সময় হরতকির গুঁড়া দাঁতের ব্যথা স্থানে যদি লাগানো হয় তাহলে ব্যথা অনেকাংশে কমে যায়।
  • যদি হরতকির গুঁড়া পানির সাথে মিশিয়ে সেই মিশ্রণ মুখে ব্যবহার করা হয় তাহলে মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
উপরোক্ত উপকারিতা গুলো ছাড়া আরো উপকার রয়েছে এই হরতকিতে। আর আশা করি অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন হরতকি খেলে কি উপকার পাওয়া যায়।

কাচা হরতকির উপকারিতা

কাঁচা হরতকির উপকারিতা অনেক রয়েছে। কাঁচা হরতকি খেলে বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা পাওয়া যায়। এটি যেমন দেহের জন্য উপকারী তেমনি বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রেও মহা ঔষধ হিসেবে কাজ করে। হরতকি খেলে অন্ত্র পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি দেহের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। হরতকি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও দেহের দুর্বলতা দূর করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। আবার হরতকি এলার্জি দূর করার ক্ষেত্রেও খুবই উপকারী।
এই হরতকি যদি পানির সাথে ফুটিয়ে নেওয়া হয় এবং সেই ফুটানো পানি পান করা হয় তাহলে এলার্জি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার শুধু রোগের ক্ষেত্রেও নয় এটি ত্বকের ক্ষেত্রেও খুবই কার্যকরী। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। হরতকি পেট পরিষ্কার করার ক্ষেত্রেও সাহায্য করে থাকে। এরকম আরও বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে। এই উপকারিতা ছাড়াও আরো যে উপকারিতা গুলো রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে জানতে হলে এই আর্টিকেল সম্পন্ন পড়তে হবে।

আর হরতকি খাওয়ার ফলে যদি কোন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তবে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এটি খাওয়া উচিত। অর্থাৎ যেকোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। আর হরতকি খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

হরতকি খেলে কী হয়

হরতকি খেলে কি হয় এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। তাই হরতকি খাওয়ার ফলে যে সকল উপকারিতা গুলো পাওয়া যায় সে সম্পর্কে জানার জন্য এই আর্টিকেল প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পড়তে হবে।

শেষ কথা

পরিশেষে, হরতকি দেহের জন্য অনেক উপকারী একটি ফল। আর এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা সেটাই জানতে পারলাম। এই আর্টিকেলে আরো জানতে পারলাম হরতকি খাওয়ার ফলে কি কি উপকার পাওয়া যায় সে সম্পর্কে। এছাড়াও আরো জানলাম হরতকির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং হরতকির ব্যবহার সম্পর্কে। 

তাই আশা করি হরতকি সম্পর্কে সফল তথ্য জানতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেল বেশি বেশি শেয়ার করে দিন। এই আর্টিকেল পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url