খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা-খেজুরের গুড়ের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জেনে নিন
আসসালামু আলাইকুম। আজকে খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা
হবে। এর পাশাপাশি এটিতে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেই সম্পর্কেও আলোচনা করা
হবে। খেজুরের গুড় সবার কাছেই খুবই প্রিয়। সবাই খেজুরের গুড় থেকে পছন্দ করে।
কিন্তু অনেকেই এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানেনা।
তাই যাদের খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানা নেই
তাদের জন্য এই আর্টিকেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং এই সকল তথ্য জানার জন্য এ
আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পড়ুন।
পেজ সূচিপত্রঃ খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা-খেজুরের গুড়ের পুষ্টি উপাদান
ভূমিকা
খেজুরের গুড় তৈরি করা হয় সাধারণত খেজুরের রস থেকেই। খেজুরের রস খেতে অনেক মজা।
খেজুরের রস যেমন মজা তেমনি খেজুরের গুড়ও অনেক মজা। সাধারণত এই খেজুরের গুড়
গ্রামাঞ্চলে বেশি তৈরি করা হয়।শীতকালে খেজুরের গুড়ের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়।
খেজুরের গুড় সবার কাছেই পছন্দনীয়। কারণ এর স্বাদ এবং গন্ধের কারণে সবাই এটিকে
পছন্দ করে। শীতকালে প্রচুর পরিমাণে পিঠা পায়েস তৈরি করা হয়। এগুলোতে খেজুরের
গুড় ছাড়া চলে না। অর্থাৎ খেজুরের গুড় ছাড়া শীতের পিঠাপুলি খাওয়া অসম্পূর্ণ
থেকে যায়। কিন্তু এই খেজুরের গুড় খেলে দেহের কি হতে পারে আপনি কি তা জানেন?
তবে চিনির চেয়ে গুড় অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। আর এই গুড়ের মধ্যে খেজুরের গুড়
বেশি জনপ্রিয়। খেজুরের গুড় শুধু খাদ্য হিসেবে নয় এটি স্বাস্থ্যের বিভিন্ন
ধরনের উপকার করে থাকে। খেজুরের গুড়ে বিভিন্ন ধরনের উপাদান রয়েছে যেগুলো
সম্পর্কে জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। সেই উপাদান গুলোর মধ্যে রয়েছে
ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ইত্যাদি। শরীরের বিভিন্ন ধরনের উপকার
হয় এই খেজুরের গুড় খেলে।
শরীরে যখন আয়রনের ঘাটতে দেখা যায় তখন বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। শরীরের এই
আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে এই খেজুরের রস। কারণ খেজুরে পড়ে প্রচুর পরিমাণে আয়রন
রয়েছে। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা হয় এই খেজুরের গুড় খেলে। সেগুলো
সম্পর্কে জানার জন্য এই ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। আর খেজুরের গুড়ের সকল
তথ্য জানতে এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন।
খেজুরের গুড়ের উপকারিতা
প্রিয় পাঠক এ পর্যায়ে আমরা জেনে নিব খেজুরের গুড়ের উপকারিতা সম্পর্কে। শীতকালে
খেজুরের গুড়ের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যায়। কারণ শীতকালীন সব পিঠাপুলি খেজুরের
গুড় দিয়ে তৈরি করা হয় বলে এর চাহিদা অনেক। আর খেজুরের গুড় ছাড়া এইসব
পিঠাপুলি কল্পনা করা যায় না। আর খেজুরের গুড়ের উপকারিতা অনেক রয়েছে। যেহেতু
খেজুরের গুড়ে বিভিন্ন ধরনের উপাদান রয়েছে সেহেতু এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই
উপকারী। তাই কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নেওয়া যাক খেজুর কুলের উপকারিতা কি কি
রয়েছে সে সম্পর্কে। খেজুরের গুড়ের উপকারিতা নিম্নরূপঃ
- শরীরে আয়রনের ঘাটতে দেখা দিলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। আর খেজুরে গুড়ে অনেক বেশি আয়রন রয়েছে। তাই খেজুরের গুড় খেলে শরীরের যে আয়রনের ঘাটতি থাকে তা পূরণ হয়ে যায়।
- হাড় ও বাতের ব্যথায় খেজুরের গুড় খুবই কার্যকরী।
- নারীদের ক্ষেত্রে খেজুরের গুড় খুবই উপকারী। এই খেজুরের গুড় খেলে নারীদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর হয়।
- খেজুরের গুড় খাওয়ার ফলে হজমে অনেক উপকার হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো রোগ অনেক অনেকাংশে দূর হয় বা মুক্তি পাওয়া যায়।
- খেজুরের গুড়ের আরো একটি উপকারিতা হচ্ছে লিভার ভালো রাখা। কারণ খেজুরে গুড়ে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম থাকে যা লিভার ভালো রাখতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় মিষ্টি আলু খাওয়ার উপকারিতা
- যেহেতু খেজুরের গুড়ে অনেক আয়রন রয়েছে সেহেতু এটি অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে কাজ করে।
- খেজুরের গুড় ত্বক ভালো রাখার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী। খেজুরের গুড় খেলে ত্বক অনেক মসৃণ এবং কোমল হয়।
- রক্ত পরিষ্কার রাখার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী এই খেজুরের গুড়। সাথে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে খেজুরের গুড়ের উপকারিতা অনেক। বিভিন্ন
ক্ষেত্রে খেজুরের গুড়ের প্রভাব বেশ ব্যাপক। তবে শীতকালে খেজুরের গুড় বিভিন্ন
পিঠাপুলি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তবে এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা
গ্রহণ করতে হবে।
খেজুরের গুড়ের অপকারিতা
তবে খেজুরের গুড়ের উপকারিতা থাকলেও এর কিছু অপকারিতা রয়েছে। তবে এর অপকারিতা
চেয়ে উপকারিতা অনেক বেশি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে খেজুর গুড়ের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
একটি জিনিসের ভালো এবং মন্দ দুটোই থাকবে এটাই স্বাভাবিক। যেকোনো জিনিস পরিমাণ মতো
খেলে সেক্ষেত্রে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। আর যদি পরিমাণের চেয়ে বেশি হয়ে যায়
তাহলে সে ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা দেখা দেয়। এই অতিরিক্ত খেজুর গুড় খাওয়ার ফলে
রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই গুড়
অনেকটা দায়ী। অর্থাৎ বেশি বেশি গুড় খাওয়ার ফলে ওজন বাড়তে পারে। যদি গুড়
স্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি না হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা
থাকে। আর এইসব জীবাণু দেহের মধ্যে প্রবেশ করে। বিধায় দেহের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা
দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুনঃ মিষ্টি খাওয়ার অপকারিতা
আর গরমকালে যদি গুড় খাওয়া হয় সে ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধার সৃষ্টি হয়। যেমন নাক
দিয়ে রক্ত পড়া। আবার গুড় তৈরীর সঙ্গে সঙ্গে যদি গুড় খাওয়া হয় তাহলে
ডায়রিয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। তাই এই সমস্ত বিষয়গুলো খেয়াল রেখে গুড়
খাওয়া উচিত। তা না হলে ছোট সমস্যা থেকে বড় সমস্যার আকার ধারণ করতে পারে। আর যে
কোন জিনিস অতিরিক্ত খেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং পরবর্তী
ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
খেজুরের গুড়ের পুষ্টি উপাদান
বন্ধুরা উপরের আলোচনায় খেজুর গুড়ের উপকারিতা সম্পর্কে এবং অপকারিতা সম্পর্কে
বলা হয়েছে। এবং এটাও স্পষ্ট যে, অপকারিতা চেয়ে উপকারিতা অনেক বেশি বলে এর
জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। খেজুরের গুড় বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। খেজুর গুড়ে
বিভিন্ন ধরনের উপাদান যেমন ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ইত্যাদি উপাদান রয়েছে।
এই উপাদানগুলো দেহের জন্য খুবই উপকারী। খেজুরের গুড় ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বেশ
কার্যকরী।
আরও পড়ুনঃ লাউ এর পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জানুন
এছাড়াও খেজুরের গুড় হজমের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী। অর্থাৎ হজম ক্রিয়ায়
খেজুরের গুড় সাহায্য করে থাকে। খেজুর গুড়ে আবার বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন রয়েছে।
যেমনঃ ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে ইত্যাদি। পুষ্টি উপাদানের
মধ্যে রয়েছে নেট কার্বোহাইড্রেট। তাই যাদের এই সম্পর্কে জানা ছিল না তারা আজকে
জেনে গেলেন। এরকম আরো নতুন নতুন তথ্য পেতে এই ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন এবং
নতুন নতুন তথ্য জানুন।
খেজুরের গুড় কোথায় পাওয়া যায়
এখনো অনেক লোক জানে না খেজুরের গুড় কোথায় পাওয়া যায়। আপনি কি জানেন খেজুরের
গুড় কোথায় পাওয়া যায়? খেজুরের গুড় প্রায় সব গ্রামাঞ্চলে পাওয়া যায়।
গ্রামাঞ্চলে এটি বেশি তৈরি করা হয়। তবে গ্রামাঞ্চলের হাটে খেজুরের গুড় অনেক
দেখা যায়। অনেকে এই গ্রামাঞ্চলের হাট থেকে খেজুরের গুড় ক্রয় করে থাকে। অনেক
কষ্ট করে এই খেজুরের গুড় তৈরি করা হয়। তাই আশা করি বন্ধুরা জেনে গেছেন খেজুরের
গুড় কোথায় পাওয়া যায়।
খেজুরের গুড়ের দাম
প্রিয় বন্ধুরা এবার আমরা জানবো খেজুরের গুড়ের দাম সম্পর্কে। অনেকে খেজুরের
গুড়ের দাম জানেনা। যাদের জানা নেই তারা আজকে এই আলোচনার মাধ্যমে জানতে পারবেন
খেজুরের গুড়ের দাম কত। খেজুরের গুড় দানা, যেটির দাম এক কেজিতে ৩৫০টাকা। এর
মধ্যে আবার ঝোলা গুড় রয়েছে। এই ঝোলা গুড়ের দাম কেজিতে প্রায় ২৭০ টাকা। এই
ঝোলা বাদে পাটালি গুড় রয়েছে। এই পাটালি গুড় বেশি ব্যবহার করা হয়। এই পাটালি
গুড়ের দাম কেজিতে প্রায় ৩২০ টাকা। আবার খেজুরের গুড়ের মধ্যে আরও বিভিন্ন ধরনের
গুড় রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই। যেমন খেজুরের গুড় নারিকেলী,
গন্ধবাতাসী ইত্যাদি।
আরও পড়ুনঃ সরিষা ফুলের মধুর দাম সম্পর্কে জনুন
খেজুরের ঝোলা গুড়
খেজুরের বিভিন্ন গুড়ের মধ্যে খেজুরের ঝোলা গুড় এর জনপ্রিয়তা কম নয়। ঝোলা গুড়
খেতে অনেক সুস্বাদু। এর গন্ধ অনেকের মন কেড়ে নেয়। অনেক কষ্টের মাধ্যমে এই গুড়
তৈরি করা হয়। খেজুরের রস আগুনে তাপ দিয়ে ঘন করা হয়। এই ঘন গুড় থেকে পাটালি
গুড় তৈরি হয়। ঝোলা গুড় খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। যদি নিয়মিত গুড়
খাওয়া হয় তাহলে ক্ষতিকর টক্সিন গুলো দূর হয়ে যায়। অর্থাৎ লিভারের যে ক্ষতিকর
টক্সিন গুলো থাকে সেগুলো বের করতে সাহায্য করে। অনেকে রয়েছে যারা মিষ্টি খেতে
পছন্দ করে না। যারা মিষ্টি খেতে পছন্দ করে না তাদের জন্য এই ঝোলা গুড় পারফেক্ট।
কারণ এতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই
উপকারী। সুতরাং আমরা জেনে গেলাম খেজুরের ঝোলা গুড় সম্পর্কে অজানা তথ্যগুলো।
খেজুরের গুড় খাওয়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠকের পর্যায়ে আমরা জানবো খেজুরের গুড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। আমরা
বিভিন্নভাবে খেজুরের গুড় খেয়ে থাকি। কেউ ঝোলা গুড় খাই আবার কেউ পাটালি গুড়
খায়। তবে গুড় খাবার তেমন কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। তবে খেজুরের গুড় নির্দিষ্ট
পরিমাণ এবং নিয়মিত খেলে স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার হয়। তবে এক্ষেত্রে
অতিরিক্ত গুড় খেলে সমস্যা হতে পারে যা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
লেখকের মন্তব্য বা শেষ কথা
পরিশেষে, খেজুরের গুড়ের গন্ধে মন কেড়ে নেয় এবং খেতে খুবই সুস্বাদ। আর এই
আর্টিকেলে আমরা জানতে পারলাম খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এর
পাশাপাশি আরো জানলাম খেজুরের গুড়ে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে এবং খেজুরের গুড়
খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। সুতরাং বন্ধুরা অবশ্যই জানতে পেরেছেন খেজুরের গুড়ের সকল
তথ্য সম্পর্কে।
তাই যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হন তাহলে বেশি বেশি শেয়ার করে দিন। যাতে অন্যরা
পড়ার সুযোগ পায়। আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। সুস্থ থাকুন,
ভালো থাকুন।