মানসিক রোগের লক্ষণসমূহ-মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় জেনে নিন


আসসালামু আলাইকুম। আজকের এই আর্টিকেলে মানসিক রোগের লক্ষণসমূহ এবং মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় গুলো কি কি এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। যাদের এই বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা নেই তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি খুবই উপকারী হবে বলে মনে করি।
মানসিক রোগের লক্ষণসমূহ-মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায়
তাই আজকের এই আর্টিকেলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। সুতরাং মানসিক রোগের লক্ষণসমূহ কি কি এবং মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় কি তা জানার জন্য এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। তাই কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নেওয়া যাক এই সকল বিষয় সম্পর্কে।

পেজ সূচিপত্রঃ মানসিক রোগের লক্ষণসমূহ-মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায়

ভূমিকা

মানসিক রোগ সম্পর্কে অনেকের ধারণা আছে আবার অনেকের ধারণা নেই। তবে আগে জানতে হবে মানসিক রোগ আসলে কি? স্বাভাবিকভাবে মানসিক রোগের কারণেই একজন ব্যক্তির আচরণে কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। অর্থাৎ অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করা যায় এবং জীবন যাপনের ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তন আসে। জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাত আসতে পারে সেগুলো মোকাবেলা করে বেঁচে থাকতে হয়।এগুলো মোকাবেলা করার সময় শারীরিক কিংবা মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি হয়। মানসিক রোগ বিভিন্ন কারণে হতে পারে‌। যেমনঃ বংশগত কারণ, শারীরিক কিংবা মানসিক নির্যাতন ইত্যাদি সহ আরো বিভিন্ন ধরনের কারণ রয়েছে যেগুলো মানসিক রোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে খুবই সহায়ক।

তবে এই রোগকে অনেকেই গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেন না। কিন্তু অন্যান্য রোগের মতো এটিও একটি রোগ। আবার এই রোগের লক্ষণগুলো অনেকেই বুঝতে পারেন না। তাই একজন ব্যক্তির যখন আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় এবং তার কাজকর্মে ভিন্নতা আসে তখন সেই বিষয়টিকে অবহেলা না করে গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে। আর যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

মানসিক রোগের নাম ও লক্ষণ

মানসিক রোগ একটি বড় ধরনের সমস্যা। মানসিক রোগীর আচরণ অন্যদের থেকে একটু ভিন্ন হয়ে থাকে। মানসিক রোগীর আচার-আচরণ, জীবন যাপন এবং চলাফেরাতে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। তবে বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগী দেখা যায়। যেমনঃ এরোটোম্যানিয়া,প্যারাফ্রেনিয়া, ফ্রেগোলি ডেল্যুশন ইত্যাদি।
এরোটোম্যানিয়াঃ এই ধরনের মানসিক রোগীর সাধারণত ভাবুক প্রকৃতির হয়। অর্থাৎ তারা ভাবে তার সাথে পরিচিত ব্যক্তি তার প্রেমে পড়েছে। এমনকি তার সঙ্গে যদি দেখা হয় তবে সে মনে করে এটি প্রেমের বহিঃপ্রকাশ। এই ধরনের রোগী কল্পনায় ভাবতে বেশি পছন্দ করে।
প্যারাফ্রেনিয়াঃ এই ধরনের রোগী নিজেকে সবার থেকে আলাদা মনে করে। অর্থাৎ নিজেকে খুবই জনপ্রিয় ব্যক্তি মনে করে। সে নিজেকে এমন কিছু কাজের দাবিদার মনে করে যে, আসলে সে বাস্তবে কাজটি সে করেনি। সে নিজেকে সবচেয়ে বিখ্যাত লোক মনে করে।
ফ্রেগোলী ডেল্যুশনঃ এ ধরনের রোগী একটু সন্দেহপ্রবন হয়ে থাকে। অর্থাৎ তারা মনে করে তাকে কেউ ফলো করছে।
মানসিক রোগীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায় যেমনঃ
  • নিজের সাথে নিজে কথা বলতে থাকে।
  • বদ্ধ ঘরে থাকতে তারা বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ মনে করে।
  • মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
  • নিজের ক্ষতি নিজে করার প্রবণতা বেড়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ অতিরিক্ত ঘুম কোন রোগের লক্ষণ
  • আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীদের নিজের শত্রু মনে করে।
  • মানসিক রোগীর ভয়ের প্রবণতা অনেক বেশি।
  • কাজ কর্মের প্রতি অনীহা প্রকাশ পায়।
  • অনিদ্রা মানসিক রোগের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
  • সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারা।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে উপরোক্ত লক্ষণ গুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ রয়েছে যেগুলোকে মানসিক রোগের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর এই সমস্ত লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

মানসিক রোগের কারণ

মানসিক রোগ বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
  • শরীরে যে বিভিন্ন ধরনের রোগ বাসা বাঁধে তা থেকেও মানসিক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • বংশগত কারণেও এ রোগ হতে পারে।
  • দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ খাওয়ার ফলে ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • ভয়ের কারণেও মানসিক রোগ হতে পারে।
  • পরিবেশগত উপাদানের কারণে হতে পারে।
  • বিভিন্ন ধরনের মানসিক চিন্তার কারণেও হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা মানসিক রোগের কারণ হতে পারে।
উপরোক্ত কারণগুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের কারণ রয়েছে যেগুলো মানসিক রোগের কারণ হিসেবে উল্লেখিত করা হয়ে থাকে। তবে মানসিক রোগের লক্ষণ কিংবা কারন বুঝতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায়

মানসিক রোগ এমন একটি সমস্যা যা মানুষের জীবনে অনেক জটিলতার সৃষ্টি করে। এই রোগ বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম থেকে বিরত রাখে এবং জীবনের আনন্দ গুলোকে নষ্ট করে ফেলে। তাই এই রোগ থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায় তা নিয়ে এখন আলোচনা করা হবে। নিম্নে মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় গুলো উল্লেখ করা হলো।
  • বিভিন্ন ধরনের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারেন।
  • বিভিন্ন ধরনের নেশা থেকে বিরত থাকা।
  • একা একা না থেকে সবার সাথে মেলামেশা করা উচিত।
  • মানসিক চাপ কমাতে হবে।
  • সুস্থ থাকার জন্য ঘুম অনেক প্রয়োজন। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো উচিত।
  • পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
  • চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া এক্ষেত্রে অনেক প্রয়োজন।

মানসিক রোগের শারীরিক লক্ষণ

মানসিক রোগ একটি বড় সমস্যা। এই রোগ সম্পর্কে অনেকের ধারণা নেই। অর্থাৎ এমন কিছু শারীরিক লক্ষণ রয়েছে যেগুলো মানসিক রোগ প্রকাশ করে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক মানসিক রোগের শারীরিক লক্ষণ গুলো কি কি।
  • অনেক সময় দুশ্চিন্তা ও বিষন্নতায় ওজন হ্রাস পেয়ে থাকে। এই ওজন কমে যাওয়া মানসিক রোগের লক্ষণ হতে পারে।
  • ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হওয়া।
  • অনেক বেশি দুশ্চিন্তা করা।
  • শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
  • মাথা ব্যথা একটি শারীরিক লক্ষণ।
  • সব সময় ক্লান্তি অনুভব করা।
  • গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়।
  • পেশীতে টান।
  • বমি বমি ভাব হওয়া।
  • দুর্বল হয়ে পড়া।
তবে উপরোক্ত লক্ষণগুলো শুধু যে মানসিক রোগের লক্ষণ এমনটি নয়, এগুলো বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। তাই আগে রোগ নির্ণয় করুন। তারপর দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

মৃদু মানসিক রোগের লক্ষণ

উপরোক্ত আলোচনায় মানসিক রোগের লক্ষণ এবং মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এই পর্বে আমরা জানবো মৃদু মানসিক রোগের লক্ষণগুলো সাধারণত কি কি হয়ে থাকে। মানসিক রোগ বড় সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়। আর এই মানসিক সমস্যা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। আর মানসিক রোগ বিভিন্ন উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। যেমন পরিবেশগত উপাদান, সামাজিক ইত্যাদি। মৃদু মানসিক রোগের লক্ষণের মধ্যে কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যাওয়া, সব সময় ভয় পাওয়া ইত্যাদি। এছাড়াও আত্মীয় স্বজন কিংবা প্রতিবেশী থেকে দূরে দূরে থাকা, মন মানসিকতার কিছু পরিবর্তন হয়, দুর্বলতা অনুভব করে থাকে।
অনেক সময় দেখা যায় ঘুমের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়। খাদ্যাভাসে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। আবার যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এমনকি রাগের মাত্রা বেড়ে যায়। তবে উপরোক্ত কারণগুলো বা উপসর্গ গুলো মৃদু মানসিক রোগের লক্ষণ এমন নয়। এই লক্ষণগুলো মানসিক রোগের কারণ নাও হতে পারে। তবে উপরোক্ত লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

মানসিক রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

ইতিপূর্বে আমরা মানসিক রোগের লক্ষণসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। তবে যাদের উপরের আলোচনায় মানসিক রোগের লক্ষণসমূহ সম্পর্কে বুঝতে সমস্যা হয়েছে তারা এই পর্বে তা স্পষ্টভাবে জেনে নিতে পারেন। তাই এই অংশটুকু গুরুত্ব সহকারে পড়ুন। চলুন তাহলে জেনে নিন মানসিক রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার গুলো কি কি।
  • মনের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। এমনকি অনিদ্রা দেখা দেয়।
  • সব সময় চুপচাপ থাকা অর্থাৎ নীরব হয়ে থাকা।
  • কোন বিষয় থেকে মনোযোগ হারিয়ে যাওয়া।
  • অন্যকে হত্যা করতে চাই। এমনকি নিজেই নিজেকে শেষ করে দিতে চাই।
  • সামান্য কিছুতেই মেজাজ খারাপ হয়ে যাওয়া।
  • আচরণে উগ্রতা প্রকাশ পাই।
তবে উপরের কারণগুলো বা উপসর্গগুলো মানসিক রোগের লক্ষণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। তবে লক্ষণগুলো দেখা মাত্রই চিকিৎসকের চিকিৎসা নিন বা পরামর্শ গ্রহণ করুন।
এবার আমরা জানবো মানসিক রোগের প্রতিকার সম্পর্কে। মানসিক রোগ ভালো করতে সর্বপ্রথম প্রয়োজন পড়ে পরিবারের সহযোগিতা। এছাড়াও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা নিতে হবে। নিয়মিত ভাবে খাদ্য গ্রহণ করার সাথে সাথে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। আবার ধুমপান বা মদ্যপান করা উচিত। তবে আসল কথা হচ্ছে কোন কিছু গ্রহণ বা খাওয়া অথবা কোন কিছু লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

শেষ কথা

পরিশেষে, মানসিক রোগ ভালো করার জন্য পরস্পর সহযোগিতা, সহানুভূতিশীলতা ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে। আর এই রোগে আক্রান্ত হলে সবাই তাকে অবহেলা করতে শুরু করে। তাই এসব বিষয়ে আমরা সতর্ক থাকব। আর এ পর্যায়ে আমরা জানলাম, মানসিক রোগের লক্ষণসমূহ , মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় কি কি এবং মানসিক রোগের কারণ কি ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে।

আশা করি উপরোক্ত আর্টিকেলে এই সকল বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। তাই উপকৃত হয়ে থাকলে আর্টিকেলটি বেশি বেশি শেয়ার করে দিন। আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url