যক্ষা রোগের লক্ষণ সমূহ কি কি-যক্ষা রোগের প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

আসসালামু আলাইকুম। আপনি কি যক্ষা রোগ সম্পর্কে জানেন? যদি জানা না থাকে, তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আপনি এই আলোচনায় জানতে পারবেন যক্ষা রোগের লক্ষণ সমূহ কি কি এবং যক্ষা রোগের প্রতিকার কিভাবে করা যায় ইত্যাদি সম্পর্কে।
যক্ষা রোগের লক্ষণ সমূহ কি কি-যক্ষা রোগের প্রতিকার
তাই যক্ষা রোগ সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা পেতে হলে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়তে হবে। কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নেওয়া যাক যক্ষা রোগের লক্ষণসমূহ কি কি এবং রোগের প্রতিকার সম্পর্কে। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পেজ সূচিপত্রঃ যক্ষা রোগের লক্ষণ সমূহ কি কি-যক্ষা রোগের প্রতিকার

ভূমিকা

যক্ষা রোগ এখন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যক্ষা রোগ সম্পর্কে অনেকের ধারণা আছে আবার অনেকের ধারণা নেই। এই রোগ আসলে বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে পার। অর্থাৎ এই রোগটি একটি বায়ুবাহিত রোগ। যক্ষা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি কিংবা কাশি দিলে জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এই জীবাণু একজন সুস্থ ব্যক্তির ফুসফুসে ঢুকে সেই ব্যক্তিকে আক্রান্ত করতে পারে। এভাবে একজন সুস্থ ব্যক্তি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে ফুসফুস ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে আক্রমণ করে থাকে।

অনেকের ধারণা এটি শুধু গরীব মানুষের হয়ে থাকে। ঘন ঘন কাশি হওয়া বা শুষ্ক কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত বের হওয়া, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। যক্ষা রোগ এখন ভালো হয়। তবে যক্ষা রোগের ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পূর্ণ মেয়াদে গ্রহণ করতে হবে। তবে এখনো এই রোগ সম্পর্কে অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে। এই ভুল ধারণা বাদ দিয়ে ইতিবাচক ধারণা তৈরী করতে হবে।

যক্ষা রোগের লক্ষণ

প্রিয় পাঠক এ পর্যায়ে আমরা জানবো যক্ষা রোগের লক্ষণ সম্পর্কে। যক্ষা রোগ হলে এর লক্ষণ কি কি হতে পারে এই ধারণা আমাদের নেই। এর লক্ষণ গুলো জানা থাকলে যক্ষা রোগ কিনা তা সহজে বোঝা যায়। তাই এ ক্ষেত্রে আমাদের জানা উচিত যক্ষা রোগের লক্ষণগুলো কি কি। চলুন জেনে নিন রক্ষা রোগের লক্ষণ সম্পর্কে।
  • কাশি তিন সপ্তাহ বা তার অধিক সময়।
  • ক্রমাগত কমতে থাকে।
  • মাঝেমধ্যে কাশির সঙ্গে রক্ত বেরিয়ে আসা।
আরও পড়ুনঃ মাথা ব্যাথা কোন রোগের লক্ষণ
  • বুকে ব্যথা অনুভব করা।
  • ক্ষুধা কমে যায়।
  • দুর্বলতা অনুভব করা।
  • কাশি হলে সাথে কফ বের হওয়া।
উপরোক্ত লক্ষণ গুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন লক্ষণ রয়েছে যেগুলো যক্ষা রোগের লক্ষণ হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং চিকিৎসা নিন।

যক্ষা রোগের কারণ

যক্ষা রোগ সম্পর্কে ধারণা থাকলেও অনেকের যক্ষা রোগের কারণ সম্পর্কে ধারণা নেই। যক্ষা রোগ কেন হয় এটা জানা একান্ত প্রয়োজন। তাই চলুন জেনে নিই যক্ষা রোগের কারণ সমূহ কি কি রয়েছে সেই সম্পর্কে।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • ক্যান্সার হলে যক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • অধিক ধূমপান করলে যক্ষা হতে পারে।
  • আক্রান্ত ব্যক্তি যদি হাঁচি কিংবা কাশি দেয়, সে ক্ষেত্রে জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং সুস্থ ব্যক্তি যক্ষা রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
  • কথার মাধ্যমে এর জীবাণু ছড়াতে পারে এবং এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • ডায়াবেটিস হলেও যক্ষা হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
উপরোক্ত কারণগুলোর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই কারণগুলো ছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের কারণ রয়েছে। সুতরাং উপরোক্ত কারণ গুলো বা লক্ষণ গুলো দেখা গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে চিকিৎসা গ্রহণ করুন।

যক্ষা রোগের প্রতিরোধ

যক্ষা রোগের জীবাণু যেহেতু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে,সেজন্য অন্য ব্যক্তি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। আর এই যক্ষা রোগ কিছু নিয়ম অনুসরণ করে চললে প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই চলুন জেনে নিই প্রতিরোধের কিছু উপায় সম্পর্কে।
  • যক্ষা রোগের প্রতিরোধের ক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যায়াম খুবই কার্যকরী।
  • বসবাসের জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে এবং সেই জায়গায় যেন আলো বাতাস সহজে প্রবেশ করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • যক্ষা রোগীর সংস্পর্শ পরিহার করতে হবে।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির কফ কিংবা থুথু নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে।
  • যেহেতু এই রোগ হাঁচি কিংবা কাশির মাধ্যমে দ্রুত ছড়ায় সেজন্য হাসি কিংবা কাশি দেওয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করা উচিত।
  • যদি যক্ষা রোগ মনে হয় তবে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে বা কফ পরীক্ষা করা উচিত।
  • যখন একটি শিশু জন্ম নেয় তখন তাকে বিসিজি টিকা অবশ্যই দেওয়া উচিত।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পুষ্টিকর বা সুষম খাওয়ার খেতে হবে।
  • যক্ষা রোগীকে অন্যদের থেকে একটু আলাদা রাখা উচিত।
উপরোক্ত নিয়মগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে যক্ষা প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে যক্ষার কোন লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। আর যক্ষা রোগের লক্ষণ জানার পাশাপাশি যক্ষা রোগ কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় এই বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।

যক্ষা রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ

প্রিয় পাঠক এ পর্যায়ে আমরা জানব যক্ষা রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে। যক্ষা রোগ কিভাবে প্রতিকার এবং প্রতিরোধ করা যায় সেই সম্পর্কে এ পর্যায়ে আলোচনা করা হবে। তাই এই সম্পর্কে জানার জন্য মনোযোগ সহকারে নিম্নের বিষয়গুলো পড়ুন। আগে ধারণা ছিল যক্ষা হলে রক্ষা নাই। কিন্তু বর্তমানে এখন এই রোগের চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এ রোগ ভালো হয়। তবে এই রোগ সম্পূর্ণ ভালো করার জন্য ওষুধের কোর্স পূর্ণ করতে হবে। কারণ কিছুদিন ওষুধ খাওয়ার পর তারা মনে করে রোগ ভালো হয়ে গেছে। এজন্য এরা ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেয়। আর এর ফলাফল তখন খারাপ হয়। তাই ধৈর্য সহকারে চিকিৎসকের চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। যক্ষা রোগীকে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার গুলো বেশি বেশি খাওয়াতে হবে। এবং আক্রান্ত ব্যক্তির বিশ্রাম নেওয়া উচিত।
ইতিপূর্বে উপরের আলোচনায় যক্ষা রোগের প্রতিরোধ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যক্ষা রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় আছে যেগুলো অনুসরণ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। যক্ষায় আক্রান্ত ব্যক্তি সবার সামনে হাঁচি কাশি দেওয়া থেকে বিরত হতে হবে। পাশাপাশি যক্ষায় আক্রান্ত ব্যক্তির থুথু কিংবা কফ যেখানে সেখানে ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাদের এই কফ বা থুথু নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা উচিত। যখন একটি শিশু জন্মগ্রহণ করে তার পরপরই বিসিজি টিকা দিয়ে নিতে হবে। যখন আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি কিংবা কাশি দেওয়ার সময় অবশ্যই কাপড় ব্যবহার করতে হবে।

যক্ষা রোগীর খাবার তালিকা

এবার আমরা জেনে নিব যক্ষা রোগী কি কি খাবার খেতে পারবে সে সম্পর্কে। আসলে আমরা অনেকেই জানিনা, যক্ষা হলে কোন ধরনের খাবার খাওয়া উচিত। এই সম্পর্কে ধারণা না থাকলে অনেক সময় ছোট সমস্যা বড় আকার ধারণ করতে পারে। তাই যক্ষা রোগীর কি কি খাওয়ার খাওয়া যাবে সে সম্পর্কে ধারণা থাকলে এক্ষেত্রে খাবার নির্বাচন করা খুবই সহজ হয়। মাছ, চর্বিহীন মাংস ইত্যাদি খাবার গুলো প্রোটিনে ভরপুর। এই খাবারগুলো যক্ষা রোগীর জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ফলমূল এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাবার। 
এছাড়াও ভিটামিন এ, ই, সি ইত্যাদি খাবারগুলো যক্ষা রোগীর খাদ্য তালিকায় রাখা যায়। আবার যে খাবারগুলোতে শর্করার পরিমান বেশি সেগুলো খুবই প্রয়োজন। এছাড়াও গাজর, জলপাই, পেয়ারা এই খাবারগুলো অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। সুতরাং আশা করা যায় উপরোক্ত খাবার গুলো যক্ষা রোগীর জন্য উপকারী। তাছাড়া যক্ষা রোগীর কি কি খাওয়া উচিত এ বিষয়ে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে খাবার গ্রহণ করা উচিত।

যক্ষা কি ছোঁয়াচে রোগ

যক্ষা ছোঁয়াচে রোগ কিনা এ প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে, যক্ষা রোগ ছোঁয়াচে কিনা। তাই এ পর্যায়ে আমরা স্পষ্টভাবে জেনে নিব রক্ষা রোগ ছোঁয়াচে রোগ কিনা। আসলে যক্ষা রোগ ছোঁয়াচে নয়। কেননা যক্ষা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়। অর্থাৎ হাঁচি  বা কাশি থেকে এ রোগ ছড়াতে পারে। এই জীবাণু একজন সুস্থ ব্যক্তির ফুসফুস সহ অন্যান্য স্থানে  আক্রান্ত করতে পারে। তবে যে শুধু ফুসফুসে হয় এমন নয়, এটি শরীরের আরও কিছু অঙ্গ রয়েছে সেগুলোতেও হতে পারে। তাই যক্ষা রোগ প্রতিরোধে সচেতন হতে হবে। আর অধিক পরিমাণ কাশি এবং কাশির সাথে কফ বের হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করুন এবং ওষুধ সেবন করুন।

যক্ষা কি ভাইরাস জনিত রোগ

পাঠক আসুন আমরা এ পর্যায়ে জানব যক্ষা ভাইরাস জনিত রোগ নাকি ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ ইত্যাদি সম্পর্কে। আগে মানুষের ধারণা ছিল যক্ষা হলে রক্ষা নেই। কিন্তু এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত। এখন সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে যক্ষা রোগ ভালো হয়। যক্ষা আসলে ভাইরাস জনিত রোগ হিসেবে গণ্য করা হয় না। 
যক্ষা রোগ ব্যাকটেরিয়া বাহিত রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এজন্য যক্ষা রোগী হাঁচি ,কাশি সময় অবশ্যই কাপড় বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে। অবশ্য যক্ষা রোগ হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং চিকিৎসকের চিকিৎসা সঠিকভাবে গ্রহণ করতে হবে।

যক্ষা রোগের ভাইরাসের নাম কি

যক্ষা রোগের জীবাণু বাতাসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং সুস্থ ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে। যক্ষা রোগের জীবাণু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফুসফুসে প্রভাব ফেলে। যক্ষা রোগের জীবাণু বা ভাইরাসের নাম হলো মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস। এই যক্ষা রোগের জীবাণু মানবদেহে বা প্রাণীদেহে দীর্ঘদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। আশা করি জানতে পেরেছেন যক্ষা রোগের ভাইরাসের নাম কি। আর যক্ষ্মা রোগ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিন।

শেষ কথা

অবশেষে, যক্ষা রোগ ভালো করার ক্ষেত্রে চিকিৎসা বা এর ওষুধ গ্রহণের সম্পূর্ণ কোর্স পূর্ণ করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সম্পূর্ণ কোর্স পূর্ণ না করলে যক্ষা রোগ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। তাই যক্ষা রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করুন। যক্ষা রোগের যে লক্ষণগুলো রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা থাকতে হবে। আর এই আর্টিকেলে আমরা জানতে পারলাম যক্ষা রোগের লক্ষণ সমূহ কি কি এবং যক্ষা রোগ কিভাবে প্রতিকার কিংবা প্রতিরোধ করা যায় ইত্যাদি সম্পর্কে।

আশা করি যক্ষা রোগ সম্পর্কে আপনি পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। আর আর্টিকেলটি পড়ে যদি একটু উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আর্টিকেলটি শেয়ার করে দিন। আর নতুন নতুন তথ্য পেতে এই ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। ধন্যবাদ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url