মাটি বা পরিবেশের কোন বৈশিষ্ট্যের জন্য ধান বেশি জন্মে-গম কোন মাটিতে ভালো হয়
আসসালামু আলাইকুম। আজকে খাদ্য শস্য নিয়ে আলোচনা করব। অনেকের মনে প্রশ্ন আসবে
এগুলো জেনে আমাদের কি লাভ? আর এইগুলো তো শুধু কৃষকের জানা উচিত। আজকে যে ধান এবং
গম নিয়ে আলোচনা করব, এটি শুধু কৃষক নই সকল পর্যায়ের মানুষের এগুলো সম্পর্কে
জানা উচিত।
তাই মাটি বা পরিবেশের কোন বৈশিষ্ট্যের জন্য ধান বেশি জন্মে-গম কোন মাটিতে ভালো
হয়, ভালো চারা কিভাবে বাছাই করতে হবে, কিভাবে পরিচর্যা করতে হবে ইত্যাদি বিষয়
গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। বিস্তারিত জানার জন্য শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে
থাকুন।
পেজ সূচিপত্রঃ মাটি বা পরিবেশের কোন বৈশিষ্ট্যের জন্য ধান বেশি জন্মে-গম কোন মাটিতে ভালো হয়
ভূমিকা
ধান এবং গম এ দুটোই বাংলাদেশের মাটিতে জন্মে থাকে। তবে এ দুটো ফসলই কোন অঞ্চলে
বেশি আবার কোন অঞ্চলে কম জন্মে থাকে। কারণ একেক অঞ্চলের মাটি একেক রকম বৈশিষ্ট্য
হওয়ার কারণে এই তারতম্য হয়ে থাকে। তবে বেলে মাটি এঁটেল মাটিতে ধান ভালো জন্মে
থাকে। তবে কিছু ধান আছে যেগুলো উঁচু-নিচু জমিতে চাষাবাদ করা হয়ে থাকে।
গম নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে বেশি ভালো জন্মে থাকে। গমের জন্য উপযুক্ত মাটি হচ্ছে বেলে
দোআঁশ মাটি। তাহলে জানতে হবে মাটি বা পরিবেশের কোন বৈশিষ্ট্যের জন্য ধান বেশি
জন্মে-গম কোন মাটিতে ভালো হয় ইত্যাদি সম্পর্কে। তাই চলুন বিস্তারিত জেনে নিই এই
বিষয়গুলো সম্পর্কে।
ধান কোন পরিবেশে ভালো হয়
বর্তমানে ধানের ফলন দিন দিন কমে যাচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে, ধানের চাষাবাদ সম্পর্কে
আমাদের স্পষ্ট জ্ঞান বা ধারণা নেই।এর চাষাবাদ সঠিকভাবে করতে পারিনা। তাই ধান কোন
পরিবেশে ভালো হবে সেটা জানতে হবে। ক্রান্তীয় মৌসুমী অঞ্চল ধান চাষের জন্য
উপযুক্ত পরিবেশ। ধান উৎপাদন করার জন্য অনেক বৃষ্টির প্রয়োজন হয়। ধান চাষাবাদ
করার জন্য গড়ে ১০০-২০০ cm বৃষ্টির প্রয়োজন।
আরও পড়ুনঃ আলুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
যদি বৃষ্টিপাত অল্প পরিমাণে হয়ে থাকে তাহলে সেচ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। চারা
একটু বড় হলেই তখন বৃষ্টির পরিমাণটা বেশি লাগে। এক্ষেত্রে ধান চাষাবাদ করার জন্য
উর্বর মাটির প্রয়োজন হয়। ধান চাষের জন্য দোআঁশ মাটি খুবই উপযুক্ত। তবে এই মাটি
কাদাযুক্ত হলে বেশি ভালো হয়। কারণ শিকড় সহজে নিচে প্রবেশ করে।
কিভাবে ধানের ভালো চারা বাছাই করা হয়
ধানের ফলন ভালো হলেই শুধু হয় না। এর জন্য ভালো চারা বাছাই করা জরুরী কাজ। কারণ
ভালো চারা না হলে, ধান ভালো হয় না। তাই ভালো চারা নির্বাচন করার ক্ষেত্রে দেড়
কেজি ইউরিয়ার সাথে ৪০ লিঃ পানি যুক্ত করে নিন। তারপর সেই মিশ্রণে চারাগুলো দিয়ে
দিন। এক্ষেত্রে দেখা যাবে ভালো চারা বা পুষ্ট চারা গুলো মিশ্রণের নিচে পড়ে যাবে।
আর পাতলা বা খারাপ গুলো পানির উপরে ভেসে যাবে। তারপর ভালো চারা গুলো সংগ্রহ করে
নিতে হবে। এভাবে যদি চারা বাছাই করা যায়, তাহলে ভালো ফলন পাওয়ার আশা করা যায়।
কিভাবে ধানের পরিচর্যা করতে হয়
ধান লাগানোর পর কাজ শেষ হয়ে যায় না। সেটি পরিচর্যার মাধ্যমে বড় করে তুলতে হয়।
সঠিক পদ্ধতিতে ধানের পরিচর্যা করলে অধিক ফসল পাওয়া সম্ভব। তাই আমন ধানের
ক্ষেত্রে পরিচর্যা হবে নিম্নরূপ। জমিতে আমনের বীজ রোপণ করে, ১০ থেকে ১৫ দিন পরে
ইউরিয়া প্রয়োগ করলে চারা দ্রুত বেড়ে ওঠে।তারপর বীজতলা প্রস্তুত করে নিতে হবে।
এরপর চাষ করে মই দিয়ে জমি কাদা করতে হবে। জমি যদি খুব উর্বর হয় তাহলে সার
দেওয়ার দরকার নেই।
প্রতি বর্গ মিটারে ৮০ গ্রাম চারা লাগে। যদি সুস্থ সবল চারা পেতে চান তাহলে
নিয়মিত সেচ দিতে হবে, আগাছা পরিষ্কার করা ইত্যাদি কাজগুলো করতে হবে। চারা যখন
হলুদ বর্ণ ধারণ করবে সামান্য ইউরিয়া ৭ gm(প্রতি বর্গমিটারে) সার ছিটিয়ে দিন।
পরে যদি সে হলুদ ভাব না কাটে তাহলে ১০gm জিপসাম দিতে পারেন। এভাবে পরিচর্যার
মাধ্যমে ভালো ফসল পাওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন
বোরো ধানের ক্ষেত্রে বীজ লাগানোর বিশ দিন পর ইউরিয়া দিতে পারেন। চারার বয়স যখন
৬০ দিনের কাছাকাছি চলে আসে তখন আরেকবার ইউরিয়া দিতে পারেন। এই সময় পোকাতে বেশি
আক্রমণ করে থাকে। তাই এই পোকা দমন করার জন্য বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে।
ধানে সার প্রয়োগের নিয়ম
ধান লাগানোর পর ধানের পরিচর্যা এবং সঠিক সময়ে সার প্রয়োগ একান্ত প্রয়োজন।
জমিতে কি পরিমান সার ব্যবহার করতে হবে আমরা অনেকেই জানি না। আমরা একটা নির্দিষ্ট
পরিমাণ সার প্রয়োগ করে থাকি। কিন্তু এই সার পরিমাণ মতো না দিলে ভাল ফলন পাওয়া
যায় না। তাই সার প্রয়োগ করার আগে জানতে হবে কতটুকু বা কি পরিমান সার প্রয়োগ
করা উচিত। তবেই ভালো ফলন পাওয়ার আশা করা যায়।
এক বিঘা জমিতে DAP 15kg,MOP 10kg,Zipsum 10kg,Zink 1kg দিতে হবে। প্রয়োজন
অনুসারে পরিমাণ মতো আরো বালাই নাশক বা কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন। উপরোক্ত
পরিমাণ অনুযায়ী পরবর্তীতে এই সারগুলো ব্যবহার করতে হবে।
গম কোন পরিবেশে ভালো হয়
গম উৎপাদন করার জন্য পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে আসতে হয়। একেক জায়গায় একেক রকম
পরিবেশ থাকার কারণে গম উৎপাদনে কম বেশি হয়ে থাকে। গম নাতিশীতোষ্ণ কিন্তু যেখানে
বৃষ্টিপাতের মাত্রা খুব কম সে অঞ্চলে গম ভালো হয়। শীত ও উষ্ণ আবহাওয়াতেও কম
উৎপাদন অনেক ভালো হয়। গম উৎপাদনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত তাপমাত্রা হল
১৪°-১৯°সেলসিয়াস। আর বৃষ্টিপাত ৫০-১০০ cm হলে ভালো হয়। তবে বৃষ্টিপাতের মাত্রা
যদি ১০০ সেন্টিমিটার অতিক্রম করে তাহলে সেটি গমের জন্য ক্ষতিকর। শীতের সময় গম
উৎপাদন করলে যদি বৃষ্টিপাত ৪০ সেন্টিমিটারের নিচে হয় সেক্ষেত্রে কোন সমস্যা হয়
না।
বাংলাদেশে কোন ঋতুতে গম চাষ করা হয়
ধানের পর গমকে অন্যতম ফসল হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশ থেকে গম অনেক রপ্তানি
করা হয়। গম চাষাবাদ করার জন্য শীতকাল উপযুক্ত সময়। এই ঋতুতেই গম চাষাবাদ করা
হয়ে থাকে। তাই উপযুক্ত সময়ে এই বীজ রোপন করতে হবে। নভেম্বর - ডিসেম্বর মাসে এর
বীজ রোপনের সঠিক সময় হিসেবে ধরা হয়।
গম চাষের জন্য কোন অঞ্চল বেশি উপযোগী
গম প্রায় সব অঞ্চলেই হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু অঞ্চলে বেশি গম উৎপাদন হয়। যেমন
রাজশাহী, ফরিদপুর, রংপুর, কুষ্টিয়া ইত্যাদি অঞ্চলে গম চাষ করা হয়। এছাড়াও
ময়মনসিংহ, কুমিল্লা অঞ্চলেও এর চাষ হয়। এক্ষেত্রে গম উৎপাদনে বাংলাদেশ পিছিয়ে
নেই। এক্ষেত্রে অঞ্চল ভেদে গমের ফলনে পার্থক্য হয়। যেগুলো উঁচু জমি সেগুলোতে গম
উৎপাদন করার ক্ষেত্রে উপযুক্ত।
গম কাটার সময়
শীতকালে গম বপন করা হয়ে থাকে। তারপর এটি পাকতে বেশ কয়েক মাস সময় নেয়। কিন্তু
গম কাটার একটা নির্ধারিত সময় রয়েছে। এই নির্ধারিত সময়ে গম কাটা উচিত। গম কাটার
উপযুক্ত সময় হচ্ছে গ্রীষ্মকাল। এই সময় গম ঠিকঠাক মতো পরিপূর্ণ হয়ে পেকে যায়।
বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের দিকে গম সঠিক সময়ে না কেটে একটু আগে বা একটু পরে কাটে।
এজন্য এদের গমের ফলনটা কমে যায়। তাই অধিক ফলনের জন্য নির্ধারিত সময়ে কম কাটতে
হবে।
সরিষা কাটার সময়
সরিষা এটাও শীতকালে বপন করার হয়। তবে গম এবং সরিষা কাটার মধ্যে সময়ের একটু
পার্থক্য রয়েছে। সরিষা সাধারণত ফেব্রুয়ারি- মার্চ এই দুই মাসের মধ্যে কাটা শুরু
হয়ে যায়। তবে সরিষা যদি এক তৃতীয়াংশ হলুদ বর্ণ ধারণ করে তাহলে কেটে নিন।
শেষ কথা
অবশেষে, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে ধান এবং গম সম্পর্কে আমরা পূর্ণ ধারণা পেয়েছি।
অর্থাৎ মাটি বা পরিবেশের কোন বৈশিষ্ট্যের জন্য ধান বেশি জন্মে-গম কোন মাটিতে ভালো
হয়, ধান কোন পরিবেশে ভালো হয়, কখন কাটতে হবে, কিভাবে পরিচর্যা করতে হবে, গম
কাটার সময় কখন এবং কোন অঞ্চলে বেশি গম জন্মে ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
করা হয়েছে এই আর্টিকেলে।
তাই আশা করি ধান এবং কম সম্পর্কে যে আলোচনা করা হয়েছে তা অবশ্যই উপকারে আসবে। আর
আপনি উপকৃত হলে আমার শ্রম সার্থক হবে। কেননা এটা অনেক কষ্ট করে লেখা হয়েছে। আর
অন্য যেন উপকৃত হতে পারে সেজন্য বেশি বেশি শেয়ার করে দিন। ধন্যবাদ