অতিরিক্ত ঘুম কোন রোগের লক্ষণ জেনে নিন



আসসালামু আলাইকুম। আজকের বিষয়টা আপনাদের কাছে অতি পরিচিত। আসলে আমরা সকলেই ঘুম প্রিয়। সবাই আমরা বেশি বেশি ঘুমাতে পছন্দ করি। এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না যে ঘুম পছন্দ করে না। আমার অনেকেই জানিনা যে অতিরিক্ত ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না খারাপ। এর ক্ষতিকর দিকগুলো না জানার কারণে আমরা অতিরিক্ত ঘুমাই।
অতিরিক্ত ঘুম কোন রোগের লক্ষণ
আসলে কোন জিনিস যখন মাত্রার চেয়ে বেশি হয়ে যায় তখন সেটা খারাপ হয়ে যায়। সেরকম ঘুমের ক্ষেত্রেও এ কথাটা প্রযোজ্য। তাই আজকে আমরা জানবো অতিরিক্ত ঘুম কোন রোগের লক্ষণ এবং এর ফলে কি কি হতে পারে এবং এর সমাধান কি হতে পারে ইত্যাদি।

পেজ সূচিপত্রঃ অতিরিক্ত ঘুম কোন রোগের লক্ষণ

ভূমিকা

ঘুম এমন একটি জিনিস যেটি আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ঘুম মানুষের ক্লান্তিকে দূরে ঠেলে দিয়ে কর্মক্ষম করে তোলে। আমাদের ঘুমটা যদি পরিপূর্ণ না হয় তাহলে অনেক সমস্যা হতে পারে তেমনি অতিরিক্ত ঘুমালেও সমস্যা হয়ে থাকে। রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরের ক্লান্তি ভাব চলে আসে। এর ফলে ডায়াবেটিস সহ বন্ধ্যাতার রোগ হতে পারে। 

বেশি ঘুমালে ডিপ্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর কারণে অনেকে মানসিক দুশ্চিন্তায় ভুগে থাকে। এই এই দুশ্চিন্তা কারণে শরীরে অনেক রকম সমস্যা দেখা দেয়। বেশি ঘুম আসার রোগকে বলা হয় হাইপারসোমনিয়া। এটি হলে একজন মানুষের পক্ষে জেগে থাকা অসম্ভব হয়ে যায়। তাই ঘুমটা যেন সময়মতো এবং পরিমাণমতো হয় সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।

অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায়

আমাদের শরীরকে ঠিক রাখার জন্য ঘুম প্রয়োজন। ঘুম যদি পরিপূর্ণ হয় তাহলে আমাদের শরীর এবং মন দুটোই ভালো থাকে। আর যদি ঘুম কম বা বেশি হয়ে যায় তাহলে বিভিন্ন রকম সমস্যা হতে পারে। আবার অতিরিক্ত ঘুমালে অনেক রকম সমস্যা দেখা দেয়। তাই এই অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায় গুলো সম্পর্কে জেনে নিব।
  1. অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য চা বা কফি খেতে পারেন। যদি ঘুম বেশি আসে তাহলে চা বা কফি খাবার পরিমাণটা একটু বাড়িয়ে দিন। তবে চা বা কফি সন্ধ্যার আগেই খাবেন। তা না হলে রাতে ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি হবে।
  2. অতিরিক্ত ঘুম কমাতে রাতে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। রাতে যদি পরিপূর্ণ ঘুম না হয় তাহলে দিনের সময় ঘুম পেতে পারে। তাই রাতে যত দ্রুত সম্ভব ঘুমিয়ে পড়া।
  3. রাতে শুয়ে যাওয়ার পর ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। আমরা অনেক রাত পর্যন্ত ফোন ব্যবহার করে থাকি। যার ফলে আমাদের ঘুমটা পরিপূর্ণ হয় না। এ কারণে অন্য সময় ঘুম আসতে পারে। তাই এটি পরিহার করুন।
  4. ঘুমের সময় সকল চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। তাহলে ঘুমটা পরিপূর্ণ হবে এবং অন্য সময় আর ঘুম আসবে না।
  5. যদি অফিসে কাজ করে থাকেন, তাহলে অনেকক্ষণ কাজের কারণে অনেক সময় ঘুম চলে আসে। এই ঘুমকে দূর করার জন্য আপনি একটু হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।
  6. অনেকের দিনের বেলায় ঘুমানোর অভ্যাস আছে। এই অভ্যাসটা দূর করার জন্য হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। যা আপনার ওজন কমাতে এবং ঘুম কমাতে দুটো ক্ষেত্রেই সাহায্য করে থাকে।

অতিরিক্ত ঘুম

অতিরিক্ত ঘুমালে কি ক্ষতি হয়

ঘুম ভালো তবে অতিরিক্ত ঘুম ভালো না। অতিরিক্ত ঘুমানোর কারণে যে সকল ক্ষতি হতে পারে বা হয়ে থাকে তা হচ্ছে-
  • অতিরিক্ত ঘুমানোর কারণে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে।
  • অতিরিক্ত ঘুমালে মহিলাদের গর্ভধারণ ক্ষমতা অনেকাংশে কমে যায়। কারণ ঘুমের সাথে মহিলাদের ঋতুস্রাবের সম্পর্ক রয়েছে।
  • অতিরিক্ত ঘুমালে ওজন বেড়ে যায়। আর এই বেড়ে যাওয়ার হারটা হচ্ছে ২৫%।
  • মানসিক বিকাশ তখনই বাধাগ্রস্থ হবে যখন আপনি বেশি ঘুমাবেন।
  • আরেকটি সমস্যা দেখা দেয় সেটি হচ্ছে হৃদযন্ত্রের। অতিরিক্ত ঘুমালে এই সমস্যাটা হতে পারে।

ঘুম কমানোর প্রাকৃতিক উপায়

ঘুম কমানোর অনেক পদ্ধতি রয়েছে। তার মধ্যে কিছু প্রাকৃতিক উপায় রয়েছে। এই উপায় গুলো অনুসরণ করলে আপনার ঘুম কমানো সম্ভব হবে।
  1. রাতের ঘুমটা যেন ভালোভাবে হয় সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। রাতে ঘুম হলে দিনের বেলায় ঘুম আসার সম্ভাবনা কমে যায়।
  2. ঘুম কমাতে চা কিংবা কফি খেতে পারেন।
  3. দিনে বিছানায় শুয়ে বই পড়া কিংবা টিভি দেখা থেকে বিরত থাকুন। কারণ শুয়ে বই পড়লে কিংবা টিভি দেখলে ঘুম আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
  4. ঘুমানোর একটি নির্দিষ্ট সময় করে নিন এবং নির্দিষ্ট সময়ে ওঠার চেষ্টা করুন। এই নির্দিষ্ট সময়টা ধরে রাখুন, তাহলে ঘুমের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হবে না। ফলে অন্য সময়ে ঘুম আসার সম্ভাবনাও থাকে না।
  5. বেশি ঝাল যুক্ত খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। ঘুম কমানোর এটি একটি কার্যকরী পদ্ধতি।
  6. ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন।

পড়ার সময় ঘুম কমানোর উপায়

পড়তে পড়তে অনেকেরই ঘুম চলে আসে। ফলে পড়ার সময় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। তাই এই ঘুমকে তাড়ানোর কিছু পদ্ধতি রয়েছে। যেমন-
  1. পড়ার সময় ঘুম দূর করার জন্য ফাইবারসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। কারণ ফ্যাট জাতীয় খাবার খেলে অলসতা বাড়ে।
  2. রাতে পরিপূর্ণভাবে না ঘুমালে পড়ার সময় ঘুম চলে আসে। তাই রাতে কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত।
  3. রাতে কখনোই একটানা পড়বেন না। পড়ার মাঝে বিরতি নিন। তাহলে ঘুম ভাবটা কেটে যাবে।
  4. কখনোই কম আলোতে পড়বেন না। কারণ কম আলোতে করলে ঘুম আপনাকে চেপে ধরবে। পড়ার সময় অবশ্যই রুমে অধিক উজ্জ্বল আলোর বাল্ব ব্যবহার করুন।
  5. পড়ার সময় ঘুম দূর করার জন্য দিনের বেলায় ঘুমাতে পারেন। তাহলে রাতে পড়ার সময় আর ঘুম ভাবটা আসবে না।
পড়ার সময় ঘুম
উপরোক্ত নিয়মগুলো যদি সঠিকভাবে বা সঠিক নিয়মে অনুসরণ করে চলতে পারেন তাহলে উপরোক্ত সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।

দিনের বেলা ঘুম কমানোর উপায়

দিনের বেলা ঘুমানোর অভ্যাস প্রায় মানুষেরই রয়েছে। কেউ বেশি ঘুমায় আবার কেউ কম ঘুমায়। দিনের বেলা ঘুম আপনার কর্ম ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। তাই এই ঘুমটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। দিনের বেলা বিছানা থেকে দূরে থাকুন। বিছানায় বই পড়া, টিভি দেখা পরিত্যাগ করুন। দিনের বেলা ঘুম কমানোর জন্য চা অথবা কফি খেতে পারেন। আমরা দিনে একটানা কাজ করার ফলে ঘুম চলে আসে। এই কাজের মাঝে একটু বিরতি নিন। বিরতির মাঝে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। তাই এই সকল পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করলে দিনের বেলা ঘুম কমানো যায়।

ঘুম কমানোর ব্যায়াম

যাদের ঘুম বেশি হয় তারা নিম্নোক্ত ব্যায়ামগুলোর মাধ্যমে ঘুম কমাতে পারেন। কিছু কিছু ব্যায়াম রয়েছে যেগুলো আপনাকে ঘুম কমাতে সাহায্য করবে। যাকে বলা হয় এরোবিক ব্যায়াম। যেমন: দড়ি নিয়ে লাফানো, সাঁতার কাটা, জগিং ইত্যাদি। এই ব্যায়াম গুলোর ফলে শরীর ঘামে এবং হৃদস্পন্দনের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই ঘুম কমানোর জন্য আমরা উপরোক্ত ব্যায়ামগুলো করতে পারি।

ঘুম কমানোর জন্য কি খাওয়া উচিত

আমরা বেশি ঘুমাতে পছন্দ করি। আসলে আমরা সবাই ঘুম প্রিয় মানুষ। কিন্তু এমন কিছু মানুষ রয়েছে যাদের ঘুম মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত হয়ে যায়। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই এই ঘুম কমানোর জন্য এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খেলে ঘুম কম হবে। ব্রকলি খেলে এতে কিছু উপকার পাওয়া যায়। কারণ ব্রকলিতে ফাইবার রয়েছে যা হজমে অনেক সময় নিয়ে থাকে। যা ঘুম আসতে বাধা দেয়।
ঘুম কমানোর জন্য খাবার

শেষ কথা

অবশেষে, এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম অতিরিক্ত ঘুম কোন রোগের লক্ষণ এবং আরো জানলাম অতিরিক্ত ঘুমের কারণে কি কি হতে পারে, কম ঘুমালে কি ক্ষতি হবে এবং ঘুম কমানোর জন্য কি কি করা প্রয়োজন ইত্যাদি সম্পর্কে। আমি আশা করি উপরোক্ত আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অবশ্যই উপকৃত হয়েছেন এবং ঘুম সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন।

তাই শুধু আপনি জানলে হবে না অন্যকে জানার সুযোগ করে দিতে হবে। এজন্য বেশি বেশি শেয়ার করতে হবে। যাতে করে অন্যজন উপকৃত হতে পারে। আর নতুন নতুন তথ্য পেতে এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url