কচু শাকে কোন উপাদান বেশি থাকে-কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা
আসসালামু আলাইকুম। আজকের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে এমন একটি জিনিস যেটির উপকারিতা এবং
পুষ্টিগুণ বলে শেষ করা যাবে না। উপাদানটি হচ্ছে কচুর শাক এবং কচুর লতি। দুটো
জিনিসই বাজারে আমরা সহজেই পেয়ে যাই। এটি অনেকেই খেতে পছন্দ করে না। পছন্দ না
করার কারণ হচ্ছে এটির গুনাগুন সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার সাথে সাথে দেহের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে
সাহায্য করে। তাই আজকে কচু শাকে কোন উপাদান বেশি থাকে এবং কচুর লতি খাওয়ার
উপকারিতা কি কি ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে নিব। তাই চলুন জেনে নিই কচুর শাকের সকল
গুনাগুন এবং এর কার্যকারিতা সম্পর্কে।
পেজ সূচিপত্রঃ কচু শাকে কোন উপাদান বেশি থাকে-কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা
ভূমিকা
কচুর শাক কে আমরা অনেকেই চিনে থাকি। কচু শাক পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং খেতেও অনেক
সুস্বাদু। কচু শাক চেহারার উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে, ক্যান্সার প্রতিরোধেও
সক্ষম। কচু শাক খাওয়ার ফলে রাতকানা রোগ দূর হয়। কচু শাক রক্তচাপ স্বাভাবিক
রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। রক্তস্বল্পতা পূরণে সাহায্য করে থাকে। কারণ কচুর
শাকে আয়রনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে।
অপরদিকে কচুর লতি ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার। কচুর লতি মানব দেহের হাড়কে মজবুত করে
তোলে। কচুর লতি ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য হওয়ায় হজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এবং
অনেক রোগের ক্ষেত্রে এটি বেশ উপকারী। যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের ক্ষেত্রে অনেক
কার্যকরী। তাই কচুর শাক এবং কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা যেগুলো রয়েছে সেগুলো আমরা
এই দুটি খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে পেতে পারি।
কচু শাকে কি ভিটামিন আছে
আমরা জানি কচু শাক অনেক ভিটামিনে ভরপুর। কচু শাক আমাদের শরীরের ভিটামিনের অভাব
পূরণ করতে সাহায্য করে। এবং অনেক রোগও দূর করে। কচু শাকে ভিটামিন A, B, C এবং লৌহ
ইত্যাদি রয়েছে। ভিটামিন- A রাতকানা রোগ দূর করে। দেহের কোন স্থানে যদি ক্ষত থেকে
থাকে তাহলে সেটি সারিয়ে তুলতে সক্ষম।
কচুর শাকে অধিক মাত্রায় আয়রন রয়েছে, যা দেহের রক্তস্বল্পতা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রাখে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কচু শাক খুব উপকারী। কারণ এতে পটাশিয়াম
বিদ্যমান। এগুলো ছাড়াও ম্যাগনেসিয়াম ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি থাকে। যা
হাড়কে মজবুত করে তোলে।
আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগীর কাচা সজনে পাতার উপকারিতা
কচুর শাকে ফাইবার থাকার কারণে হজমে সমস্যা করে থাকে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ
রয়েছে তাদের জন্য কচু শাক বেশ উপকারী। কচু শাকে ভিটামিন বি১ (থায়ামিন), লৌহ,
শর্করা ইত্যাদিও রয়েছে।
কচু শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
কচু শাক খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। কিন্তু এই সাপ খেলে কি কি উপকার পাওয়া
যায় সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই। উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারও রয়েছে।
যেগুলো আমাদের জানা প্রয়োজন। চলুন প্রথমে উপকারগুলো জেনে নিই-
- হাড় মজবুত করেঃ কচুর শাকে ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি থাকার কারণে হাড়কে মজবুত করে তোলে। তাই কচুর শাক খাওয়া প্রত্যেকেরই উচিত।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ কচুর শাক খেলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি মিলে। কচুর শাকে পটাশিয়াম রয়েছে যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করে। তাই হৃদরোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কচুর শাক খাওয়া উচিত।
- রক্তশূন্যতার ঘাটতি পূরণঃ রক্তশূন্যতা পূরণে কচুর শাক এর অবদান অনেক। কচুর শাকে অধিক পরিমাণে আয়রন থাকে যা রক্তশূন্যতার ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে থাকে। তাই রক্তশূন্যতা পূরণে কচুর শাক খেতে হবে।
- ক্ষতস্থান সারিয়ে তোলেঃ দেহের কোন স্থানে যদি ক্ষত স্থান থাকে তাহলে সেটি সারিয়ে তুলতে কচুর শাক অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কারণ কচুর শাকে ভিটামিন সি থাকে। যা ক্ষতস্থান সারাতে সাহায্য করে।
- রাতকানা দূর করেঃ আমরা জানি কচুর শাকে ভিটামিন এ বিদ্যমান। সাধারণত ভিটামিন A এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়। তাই কচুর শাক খেলে রাতকানা রোগ দূর হয়।
- চুল পড়া বন্ধ করেঃ যেহেতু কচুর শাকে আয়রন, শর্করা, প্রোটিন ইত্যাদি থাকে, সেহেতু কচুশাক চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে।
- শুক্রাণু বৃদ্ধি করেঃ শুক্রানুর পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এই কচু শাক।
- আমাশয় প্রতিরোধঃ কচু শাক খেলে আমাশয় রোগ ভালো হয়।
- প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করেঃ অনেকের প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া হয়।
অপকারিতা সমূহঃ
- অক্সালিক এসিড থাকার কারণে খাওয়ার সময় গলায় চুলকাতে পারে।
- যাদের এলার্জি রয়েছে তারা কচু শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- কচু শাক খেলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আসলে কচু শাকের অপকারিতা নেই বললেই চলে। সামান্য কিছু অপকারিতা রয়েছে।
গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা
কচু শাক প্রায় সব মানুষের জন্যই উপকারী। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে।
তবে গর্ভাবস্থায় কচুর শাক একটি কার্যকরী উপাদান। অনেক সময় গর্ভবতী মায়ের
রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। কিন্তু কচুর শাকে অধিক মাত্রায় আয়রন থাকার কারণে এই
রক্তস্বল্পতা পূরণে সাহায্য করে। এজন্য গর্ভাবস্থায় কচুর শাক খেলে বেশ উপকার
পাওয়া যাবে। গর্ভবতী মায়েদের অনেক ভিটামিন খাওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। বিশেষ
করে ফোলেট ভিটামিন খেতে হয়। কচু শাক খাওয়ার ফলে এই ভিটামিনের অভাব পূরণ করা
হয়। তাই গর্ভাবস্থায় কচু শাক স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয়
কচু শাক খেলে কি এলার্জি হয়
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে কচুর শাক খেলে এলার্জি হয় কিনা। কচু শাক খেলে এলার্জি
হয় কিনা সেটি বোঝার জন্য প্রথমে কচুর শাক খাওয়া উচিত। খেলে, এলার্জির যে
লক্ষণগুলো রয়েছে সেগুলো যদি প্রকাশ পায়, তাহলে এ ব্যাপারে স্পষ্ট যে, আপনার
কচুর শাক খেলে এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে।খাওয়া মোটেই উচিত হবে না।
একটু লক্ষ্য করবেন, এটি খেলে মাঝে মধ্যে গলা চুলকায়। এটির কারণ হচ্ছে এটিতে
অক্সালেট রয়েছে।
কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা
কচুর শাক খেলে যেরকম উপকার পাওয়া যায়, ঠিক তেমনি কচুর লতি খেলেও অনেক উপকার
মিলে। কচুর লতি অনেক পুষ্টি গুনে ভরপুর। এতে অনেক ভিটামিন রয়েছে। যা আমাদের
শরীরের জন্য অনেক কার্যকরী উপাদান। চলুন জেনে নিই কচুর লতির উপকারিতা গুলো
কি কি।
- কচুর শাকের মতো কচুর লতিতেও আয়রন আছে। দেহে যখন রক্তস্বল্পতার অভাব দেখা দেয় তখন কচুর লতি রক্ত শূন্যতা পূরণ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- কচুর লতিতে ক্যালসিয়াম থাকার কারণে হাড়কে মজবুত করে তুলতে সাহায্য করে।
- কচুর লতিতে অধিক পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। যেটি হজমে সহায়তা করে থাকে। এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ ভালো হয়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অধিক পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়।
- ক্যান্সার রোধে কচুর লতি কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
- কচুর লতি ত্বককে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। এমনকি মস্তিষ্কের জন্য অনেক উপকারী খাদ্য
- যাদের দেহের ওজন বেশি, তাদের ওজন কমাতে কচুর লতি সাহায্য করে।
কচুর লতির পুষ্টি উপাদান
কচুর লতি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি উপাদান। আর কচুর লতিতে যে সকল পুষ্টি উপাদানগুলো
রয়েছে সেগুলোও দেহের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান। সাধারণত বর্ষাকালে কচুর লতি
বেশি পাওয়া যায়। কচুর লতিতে ভিটামিন সি বিদ্যমান। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধিতে সহায়ক। এমনকি চর্মরোগ প্রতিরোধে এটি এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে
থাকে। কচুর লতিতে ফাইবার আছে। যা হজম করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য
ভালো করে। এছাড়াও ভিটামিন বি, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ খালি পেটে পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা
কচুর লতিতে এলার্জি
কচু খাওয়ার ফলে অনেকে এলার্জি সমস্যায় ভুগেন। যাদের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ
রয়েছে, তাদের কচুর লতির সাথে চিংড়ি দিয়ে না খাওয়াই ভালো। কচুর লতি অনেক
পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য হওয়ায়, এটি খাবার তালিকায় রাখা উচিত। কারণ দেহের অনেক
সমস্যা সমাধানে বিশেষ অবদান রাখে এই কচুর লতি।
কচুর লতি দিয়ে চিংড়ি মাছ
কচুর লতির সাথে চিংড়ি মাছ অসাধারণ একটি খাবার। এই রেসিপিটা অনেক সুস্বাদু এবং
সবার কাছে পছন্দনীয়। কচুর লতি প্রায় সব বাজারেই পাওয়া যায়। প্রথমে কচুর লতি
ছোট করে কাটুন। এরপর সামান্য হলুদ এবং সামান্য লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে নিন। এখন
চিংড়ি গুলো তেলে ভালো করে ভেজে নিন। তারপর একটি কড়াইয়ে তেল দিয়ে তাতে পেঁয়াজ
বাদামী হওয়া পর্যন্ত নাড়তে থাকুন। এর সাথে আদা বাটা, সরষে বাটা, সামান্য
নারকেল, কাঁচা মরিচ, হলুদ, পরিমান মত লবণ দিন। এবার এই মশলা গুলোর মধ্যে চিংড়ি
ভাজা এবং সিদ্ধ করা কচুর লতি দিয়ে দিন। তারপর ঢাকনা দিয়ে বেঁকে দিন। কিছুক্ষণ
ঢেকে রাখার পর ঢাকনা তুলে নিন। মাখো মাখো অবস্থায় থাকলে চুলা বন্ধ করে দিন।
তাহলে আপনার সুস্বাদু কচুর লতি দিয়ে চিংড়ি রেসিপি প্রস্তুত হয়ে যাবে।
শেষ কথা
অবশেষে, কচুর শাক এবং কচুর লতিতে যে উপাদান গুলো বা পুষ্টি গুলো রয়েছে সেগুলো
প্রায় কাছাকাছি। উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেছে যে, কচুর
শাকে কোন উপাদান বেশি থাকে-কচুর লতি খাবার উপকারিতা কতটুকু রয়েছে ইত্যাদি
সম্পর্কে।
তাই আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা অবশ্যই উপকৃত হয়েছেন এবং জানতে পেরেছেন
কচুর লতি এবং কচুর শাকের ইতিহাস সম্পর্কে। অন্যজন যেন উপকৃত হতে পারে এজন্য
পোস্টটি শেয়ার করে দিন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। ধন্যবাদ