বেশি কান্না করলে চোখের কি ক্ষতি হয়-ছোট বাচ্চার কান্না থামানোর উপায় সম্পর্কে জানুন
আসসালামু আলাইকুম। আজকের বিষয়টি হচ্ছে একটু জটিল প্রকৃতির। বিষয়টি হচ্ছে কান্না
নিয়ে। আমরা বিভিন্ন কারণে কান্না করে থাকি। আবার ছোট বাচ্চারা বিভিন্ন সময়
কারণে অকারণে কেঁদে থাকে। কেউ সুখের খবর শুনে কান্না করে আবার কেউ দুঃখের খবর
শুনে কান্না করে। বিশেষ করে দুঃখের খবর শুনলে মানুষ বেশি কান্না করে।
আসলে আমরা কি জানি, কান্না করলে কোন ক্ষতি হয় কিনা এবং বাচ্চারা অতিরিক্ত কান্না
করলে কিভাবে থামাতে হয়? তাই আজকে এই আর্টিকেলে বেশি কান্না করলে চোখের কি ক্ষতি
হয় এবং যখন ছোট বাচ্চারা কান্নাকাটি করে তখন কিভাবে থামাতে হয় তার কিছু উপায়
সম্পর্কে জানব। বিস্তারিত জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।
পেজ সূচিপত্রঃ বেশি কান্না করলে চোখের কি ক্ষতি হয়-ছোট বাচ্চার কান্না থামানোর উপায়
- ভূমিকা
- কান্নার অপকারিতা
- কান্না করলে মাথা ব্যথা করে কেন
- কান্না করলে কি হয়
- অতিরিক্ত কান্না করলে কি হয়
- বেশি কান্না করলে চোখের কি ক্ষতি হয়
- ছোট বাচ্চার কান্না থামানোর উপায়
- শিশুর অতিরিক্ত কান্নার কারণ
- বাচ্চা কান্না করলে কি করব
- বাচ্চা বেশি কান্না করলে কোন সূরা পড়তে হয়
- বাচ্চা ঘুমের মধ্যে চমকে উঠে কেন
- শেষ কথা
ভূমিকা
একটি শিশু জন্ম নেওয়ার সময় কান্না দিয়েই শুরু হয় তার জীবন। এই কান্নার
মাধ্যমে বোঝা যায় শিশুটি সুস্থ আছে। শিশু থেকে বড় সবাই কাঁদে। কিন্তু এই কান্না
ক্ষেত্র বিশেষে হয়ে থাকে। মানুষ দুঃখে কাঁদবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অনেক মানুষ
আছে যারা সুখের সংবাদ শুনেও কেঁদে ফেলে। আমরা অনেক সময় দেখি কেউ পেঁয়াজ কাটলে
তার চোখ দিয়ে পানি পড়ে। এটা কিন্তু কান্নার মধ্যে পড়ে না। আসলে কান্না হচ্ছে
একটি আবেগের বিষয়। অনেক সময় কান্না করলে মনের দুঃখ হালকা হয়।
কান্না করলে যেমন চোখের উপকার হয় তেমনি অতিরিক্ত কান্নায় চোখের ক্ষতিও হয়।
একটু লক্ষ্য করবেন অনেক সময় ছোট বাচ্চারাও কেঁদে থাকে। কিন্তু এদের কান্নার কারণ
ভিন্ন রকম। প্রাপ্তবয়স্করা যে কারণে কাঁদে, ছোটরা কিন্তু সে কারণে কান্নাকাটি
করে না। কিন্তু আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হবে বেশি কান্না করলে চোখের কি ক্ষতি
হয় এবং বাচ্চারা কান্নাকাটি করলে কিভাবে বন্ধ করা যায় সেই বিষয়গুলো নিয়েই
আলোচনা করব।
কান্নার অপকারিতা
অনেকেই কান্না করতে পারেন না। আবার অনেকেই একটু সামান্য কিছুতেই কেঁদে ফেলেন।
বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কান্না করার পরিমাণ কম বেশি হয়। আসলে কান্নার সেরকম কোন
অপকারিতা নেই। বরং কান্না করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তবে কান্না যদি মনের
মধ্যে চেপে রাখা হয়, তাহলে সেটির কারণে রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কার্য
ক্ষমতা হ্রাস পায়। তবে পুরুষের চেয়ে মেয়েরা অনেক বেশি কান্নাকাটি করে। কান্না
করলে মন অনেকটা প্রশান্তি পাই। তবে বিশেষজ্ঞের মতে, কান্না করার ফলে মানুষের
মানসিক চাপ অনেকাংশে কমে যাই। তাহলে বোঝা যাচ্ছে কান্নার অপকারিতার চেয়ে
উপকারিতায় অনেক বেশি।
কান্না করলে মাথা ব্যথা করে কেন
আসলে কান্না করলে আমাদের মাথা কেন ব্যথা হয় এটা আমাদের অনেকের অজানা। কারণ
কান্নার পর মাথা অনেক ভারী হয়ে যায়, মাথার যন্ত্রনা শুরু হয়ে যায়। এখন আমরা
জেনে নিব কান্না করলে মাথা ব্যথা করে কেন। কান্না করলে মস্তিষ্কের উপর প্রভাব
পড়ে এবং চাপ সৃষ্টি হয়। যখন আমরা কান্না করি তখন আমাদের দেহ থেকে করটিসল নামক
হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোন আমাদের মস্তিষ্কের নিউরো ট্রান্সমিটারকে উজ্জীবিত করে
তোলে। এই কারণেই কান্না করার পর মাথাব্যথা হয়। কিন্তু পেঁয়াজ কাটার সময় যে
কান্না হয় অথবা খুশির খবর শুনলে যে কান্না হয়, সে কান্নায় কোনো মাথাব্যথা হয়
না। তবে রেগে কান্নাকাটি করলে সে ক্ষেত্রে মাথাব্যথা হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ জ্বর ও মাথা ব্যথা হলে করণীয়
কান্না করলে কি হয়
কান্না করলে কি হয় এটা আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে। কান্না করলে চোখের বিভিন্ন রকম
উপকার হয়।
- কান্না করার ফলে চোখ পরিষ্কার হয়ে যায়।
- চোখে থাকা বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যায়।
- কান্না করলে মনের দুঃখ হালকা হয়।
- কান্নার ফলে দেহের ক্ষতিকর টক্সিন চোখের পানির সাথে বেরিয়ে যায়।
- ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কান্না বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আপনি যখন কান্না করেন তখন আপনার শরীরের কিছু ক্যালরি খরচ হয় । যেটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
অতিরিক্ত কান্না করলে কি হয়
অতিরিক্ত কান্না করলে আমাদের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। ছোট বাচ্চা অতিরিক্ত
কান্না করলে দেহের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এতে করে বৃক্ক গ্রন্থির
কার্যক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়ে যাই। এর ফলে বাচ্চার আক্রমনাত্মক মনোভাব
সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অতিরিক্ত কান্না শিশুর গঠনেও বাধা সৃষ্টি করে
। কান্না বেশি করলে শিশু বদ রাগী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই শিশুর হাসিকে যেভাবে
আমরা গুরুত্ব দিই, ঠিক তেমনি শিশুর কান্নাকে গুরুত্ব দিতে হবে। যদি বড়রা
অতিরিক্ত কান্না করে তাহলে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।
বেশি কান্না করলে চোখের কি ক্ষতি হয়
চোখ আমাদের মহা মূল্যবান জিনিস। এই চোখের মাধ্যমেই সবকিছু দেখা সম্ভব। কিন্তু এই
চোখ যদি না থাকে কিংবা চোখের যদি কোন সমস্যা হয়ে যায় তাহলে আমাদের অনেক সমস্যার
সৃষ্টি হয়। আর আমরা যখন কান্না করি তখন চোখ দিয়েই পানি পড়ে। কিন্তু যখন বেশি
কান্না করি তখন আমাদের চোখের ক্ষতি হতে পারে। বেশি কান্নার ফলে আমাদের চোখ অনেক
সময় লালচে রঙের হয়ে যায়। এমনকি লাল হবার পর চোখ কিছুটা ফুলে যায় এবং ব্যথা
অনুভূত হয়। এবং এটি মস্তিষ্কের উপর প্রভাব ফেলে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন বেশি
কান্না করলে চোখের কি ক্ষতি হয়।
ছোট বাচ্চার কান্না থামানোর উপায়
অনেক ছোট বাচ্চা আছে যারা বেশিরভাগ সময়ই কাঁদে। কিন্তু এই কান্না থামানোর জন্য
আমরা বিভিন্ন রকম খেলনা দিয়ে থাকি। তারপরেও অনেক বাচ্চা আছে যারা থামতে চায় না।
তাই ছোট বাচ্চা থামানোর কিছু উপায় রয়েছে যা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
- ছোট বাচ্চা চুষতে পারবে এমন জিনিস দিন।
- বিভিন্ন রকম শব্দ করার মাধ্যমেও কান্না থামানো যায়।
- বাচ্চাকে দোলনাতে শুয়ে দিলেও কান্না থামে।
- হোয়াইট নয়েজ ব্যবহার করেও শিশুর কান্না থামানো সম্ভব।
- শিশু যখন কান্না করে তাকে বিভিন্ন রকম খেলনা দিতে পারেন।
সুতরাং ছোট বাচ্চা যখন কান্নাকাটি করে তখন উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে শিশুর
কান্না থামাতে পারেন।
শিশুর অতিরিক্ত কান্নার কারণ
শিশুরা কান্নাকাটি করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন অতিরিক্ত কান্নাকাটি করে তখন
বুঝতে হবে এর পিছনে কিছু কারণ রয়েছে। এমন কিছু কারণ রয়েছে যেগুলোর কারণে শিশু
অতিরিক্ত কান্নাকাটি করে। যেমন-
- শিশুকে যখন অনেক ক্ষুধা লাগে তখন সে অতিরিক্ত কান্নাকাটি করে।
- শিশুদের যখন ঘুম পায় তখন তারা বেশি কান্না করে।
- পেটের মধ্যে কোন সমস্যা দেখা দিলে কান্নাকাটি করে।
- বেশি গরম লাগার কারণেও অতিরিক্ত কান্না করে।
- অসুস্থতার কারণেও অতিরিক্ত কান্না করতে দেখা যায়।
বাচ্চা কান্না করলে কি করব
বাচ্চারা যখন কান্না করে তখন অনেকেই বিরক্ত হয়ে যায়। বিরক্ত না হয়ে বাচ্চা
কান্না করলে তাকে থামানোর জন্য কিছু করা উচিত। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না বাচ্চা
কান্না করলে সেক্ষেত্রে করণীয় কি। তাই আপনার বাচ্চা যখন কান্না করবে তখন চিৎ করে
কোলের উপর নিয়ে নিন। এছাড়াও দুই হাতের উপর সামান্য কাত করে নিতে পারেন। বিভিন্ন
রকম খেলনা দিতে পারেন। বিভিন্ন রকম অঙ্গভঙ্গি করে দেখানোর মাধ্যমেও বাচ্চার
কান্না বন্ধ করা যায়। তাই বাচ্চা যখন কান্না করবে উপরের নিয়ম গুলো অনুসরণ করুন
তাহলে ভালো ফল পাবেন।
আরও পড়ুনঃ কচুর শাক ও কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা
বাচ্চা বেশি কান্না করলে কোন সূরা পড়তে হয়
বাচ্চা বেশি কান্না করলে আমরা সাধারণত ডাক্তারের শরণাপন্ন হই। বাচ্চা বেশি কান্না
করলে উদ্বিগ্ন না হয়ে কিছু কাজ করলে বাচ্চার কান্না থেমে যায়। সুতরাং এমন কিছু
দোয়া রয়েছে যেগুলো পাঠ করে বাচ্চার শরীরে ফু দিলে সেক্ষেত্রে বাচ্চার কান্না
থেমে যায়। এক্ষেত্রে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস পড়ে বাচ্চার শরীরে ফু
দিতে পারেন। এতে করে বাচ্চার কান্না থেমে যাবে।
বাচ্চা ঘুমের মধ্যে চমকে উঠে কেন
বাচ্চারা বেশি ঘুম প্রিয়। অর্থাৎ বাচ্চারা বেশিরভাগ সময়ই ঘুমের মধ্যে থাকে।
কিন্তু ঘুমের মধ্যে বাচ্চারা হঠাৎ চমকে উঠে। কিন্তু যখন তারা চমকে ওঠে তখন খুব
ঘুমের মধ্যে থাকে। ঘুমের একপর্যায়ে এসে এরকম হয়ে থাকে। কিন্তু চমকে উঠা খুব
একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার না। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি হয়ে থাকে এবং এটা
দীর্ঘস্থায়ী নয়।
শেষ কথা
অবশেষে, কান্না বিষয়টি আসলে আবেগের সাথে জড়িত। অনেক সময় প্রবল আবেগে অনেকেই
কান্না করে থাকে। কিন্তু কান্না করলে চোখের অনেক উপকার হয়ে থাকে। কি কি উপকার
হয় সেগুলো উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আবার বেশি কান্না করলে চোখের কি
ক্ষতি হয় এই বিষয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
আরো আলোচনা করা হয়েছে বাচ্চারা অতিরিক্ত কান্না করে কেন এবং কান্না থামানোর
উপায় সম্পর্কে। তাই আশা করি উপরের আর্টিকেলটি পড়ে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান
লাভ করতে পেরেছেন। অন্যজন যাতে জ্ঞানটি লাভ করতে পারে সেজন্য বেশি বেশি শেয়ার
করে দিন।